¢२० বঙ্গদর্শন। [ ৬ষ্ঠ বর্ষ, ফাল্গুন। সে কি কথা ? নাই ত কি ? এ যজ্ঞে আমরাই সকলের বেশি মর্য্যাদা দাবী করিব। দেশলক্ষ্মীর দক্ষিণহস্ত হইতে শ্বেতচন্দনের ফোটা আমরাই সকলের আগে আদায় করিয়া ছাড়িব । ইহাতে কেহ ঝগড়া করিতে আসিলে চলিবে না । আমাদের অন্ত ভাইরা, যাহারা সুদীর্ঘকাল পশ্চিমমুখে আসন করিয়া পাষাণদেবতার বধির কানটার কাছে কাসরঘণ্টা বাজাইতে বাজাইতে ডান হাতটাকে একেবারে অবসন্ন করিয়া ফেলিয়াছেম, তাহারাই যে আমাদিগকে পিছনে ঠেলিয়া আজ প্রধান হইয়া দাড়াইবেন, এ আমরা সহ করিব কেন । স্বদেশের মিলনক্ষেত্রে একদিন যখন কাহারো কোনো সাড়াশব্দ ছিল না, যখন ইহাকে শ্মশান বলিয়া ভ্রম হইত, তখন সাহিত্যই কোদাল কাধে করিয়া ইহার পথ পরিষ্কার করিতে বাহির হইয়াছিল। সেই পথ বাংলার উত্তরে দক্ষিণে, পূৰ্ব্বে-পশ্চিমে বিস্তৃত হইয়াছে। সেই পথকে, ক্রমশই চওড়া করিয়া পৃথিবীর অদ্যান্ত বড় বড় পণ্যপ্রবাহী রাজপথগুলির সঙ্গে মিলাইয়া দিবার আয়োজন কে করিয়াছিল ? একবার ভাবিয়া দেখুন, বাঙালীকে আমরা যে বাঙালী বলিয়া অনুভব করিতেছি, তাহা মানচিত্রে কোনো কৃত্রিম রেখার জন্য নহে। বাঙালীর ঐক্যের মূলসূত্রটি কি ? আমরা এক ভাষায় কথা কই । আমরা দেশের এক প্রান্তে যে বেদন অনুভব করি, ভাষার দ্বারা দেশের অপর সীমাস্তে তাহ সঞ্চার করিয়া দিতে পারি - রাজা তাহার সমস্ত সৈন্যদল খাড়া করিয়া, তাহার রাজদণ্ডের সমস্ত विडौर्षिक ठेछऊ कबिग्रां७ हेश *ांबन न । শতবৎসর পূৰ্ব্বে আমাদের পূৰ্ব্বপুরুষ যে গান গাহিয়া গিয়াছেন, শতবৎসর পরেও সেই গান বাঙালীর কণ্ঠ হইতে উৎপাটিত করিতে পারে, এত-বড় তরবারি কোনে রাজাস্ত্রশালায় আজো শাণিত হয় নাই। এ কি সামান্ত শক্তি আমাদের প্রত্যেক বাঙালীর হাতে আছে ! এ শক্তি ভিক্ষালব্ধ নহে। ভূমিষ্ঠ হইবার পরক্ষণ হইতেই জননীর সুধাকণ্ঠ হইতে মেহ বিগলিত এই শক্তি আমরা আনন্দের সহিত সমস্ত মনপ্রাণ দিয়া আকর্ষণ করিয়া লইয়াছি এবং এই চিরন্তন শক্তিযোগে সমস্ত দূরত্ব লঙ্ঘন করিয়া, অপরিচয়ের সমস্ত বাধা ভেদ করিয়া আজ এই সভাতলে, বৰ্ত্তমান ও ভবিষ্যতের, উপস্থিত ও অনাগতের, সমস্ত বাঙালীকে আপন উদ্বেল হৃদয়ের সম্ভাষণ জানাইবার অধিকারী হইয়াছি। বাঙালীর সঙ্গে বাঙালীকে গাথিবীর জন্ত কতকাল ধরিয়া বঙ্গসাহিত্য হৃদয়তন্তুনিৰ্ম্মিত নানারঙের একটা বিপুল মিলনজাল রচনা করিয়া আসিয়াছে। আজ তাই আমাদের ঐত বেশি অঙ্গীভূত হইয়া গেছে যে, তাহ আমাদের শিরা পেশি প্রভৃতির মত আমাদের চোখেই পড়িতে চায় না । এদিকে রাজকীয় মন্ত্রণাসভায় দুইএকজন দেশীয় মন্ত্রি নিয়োগ বা পৌরসভায় দুইচারিজন দেশীয়-প্রতিনিধিনিৰ্ব্বাচনের শূন্তগর্ভ বিড়ম্বমাকেই আমরা পরম সৌভাগ্য বলিয়া গণ্য করি। ঔষধ যতই কটু হয়, তাহাকে ততই হিতকর বলিয়া ভ্রম হয়—যে চেষ্টায় যত বেশি ব্যর্থ কষ্ট, তাহার ফলটুকুকে ততই অধিক বলিয়া আমরা মনে করি। কারণ, ভাঙাপথে তৈলহীন গোরুর গাড়ির চাকার মত পণ্ডশ্রমই সব চেয়ে বেশি
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫২৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।