একাদশ সংখ্যা । ] সাহিত্যসন্মিলন। ৫২৩ পনবিছে দেউটি” এবং আজ প্রায় “নীরব রবাব বীণা মুরজ মুরলী।” ইহা হইতে বুঝিতে হইবে, যে সকল ভাব বিশ্বমানবের অভিমুখীন, তাহাই সাহিত্যকে জীবনদান করে । বৈষ্ণবধৰ্ম্মপ্লাবনের সময় বিশ্বপ্রেম যেদিন বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে সমস্ত কৃত্রিম সঙ্কীর্ণতার বেড়া ভাঙিয়াদিয়া উচ্চ-নীচ-শুচি-অশুচি সকলকেই এক ভগবানের আনন্দলোকে আহবান করিল, সেইদিনকার বাংলাদেশের গ্লান বিশ্বের• গান হইয়া *জগতের নিত্যসাহিত্যে স্থান পাইয়াছে। কিন্তু শুদ্ধধৰ্ম্ম যখন সৰ্ব্বনানবের মহেশ্বরকে দূরে রাথিয়া মানুষের মধ্যে কেবল বাচবিচার এবং ভেদবিভেদের সূক্ষাতিস্থঙ্ক সামাবিভাগ করিতে ব্যগ্র হয়, তখন সাহিত্যে, রসপ্লাবন শুষ্ক হইয়া যায়, কেবল তর্কবিতর্কবাদবিবাদের ধূলা উড়িয়া আকাশ আচ্ছন্ন করিয়া'ফেলে। বৈষ্ণবকাব্যই আমাদের দেশের সাহিত্যকে প্রথম রাজসভার সঙ্কীর্ণ আশ্রয় হইতে বৃহৎভাবে জনসমাজের মধ্যে বাহির করিয়া আনিল । পৰ্ব্বতের গুহা ভেদ করিয়া ঝরণা বাহির হইল। কিন্তু নানা দিক্ হইতে নানা ধারা আসিয়া না জুটিলে নদী হয় না। আজ বাংলায় গদ্যে-পদ্যে সম্মিলিত সাহিত্য বাঙালীজনসাধারণের হৃদয় হইতে বিচিত্র ভাবস্রোত, বিবিধ জ্ঞানপ্রবাহ অহরহ আকর্ষণ করিয়া পরিপুষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। এই সাহিত্যেই বাংলার উত্তরদক্ষিণ-পূৰ্ব্বপশ্চিম সমস্ত প্রদেশ রিস্তর আপনাকে মিলিত করিতেছে। নিখিল বাঙালীর এই হৃদয়সঙ্গমস্থলই বাঙালীর সর্ব* প্রধান মিলনতীর্থ। এই তীর্থেই আমাদের জাগ্ৰত-দেবতার নিত্য.অধিষ্ঠান হইবে এবং এইখানেই আমরা আমাদের সমস্ত যত্ন, প্রতি ও নৈপুণ্যের দ্বারা এমন ধৰ্ম্মশালা নিৰ্ম্মাণ কবিব, যেখানে চিরদিন আমাদের উত্তরকালীন যাত্রিগণ আশ্রয়লাভ করিতে পরিবে। . সাহিত্যের নামে আমরা আজ এই যে মিলনের সভা আহবান করিয়াছি, এই মিলনের বিশেষ সার্থকতা প্রমাণ করিবার জন্ত সাহিতৈরি মূলতত্বের প্রতি আপনাদের মনোযোগ প্রবৃত্ত করিতে চেষ্টা করিলাম। রাজনৈতিক মিলনের মধ্যে-বিরোধের বীজ আছে, তাহাতে পরজাতির সহিত সংঘাত আছে, কিন্তু আমাদের সাহিত্যের মিলন বিশুদ্ধ মিলন—তাহাতে পরের প্রতি বিরোধ দৃষ্টি দিবার কোনো প্রয়োজন নাই, তাহ একান্তভাবে স্বজাতির কল্যাণকর । বঙ্গসাহিত্যে বাঙালী নিজের যে পরিচয় পাইয়াছে, তাহ তাহার আত্মশক্তি হইতেই উদ্ভূত, এই কারণে সাহিত্যসম্মিলনে আমরা ক্ষুণ্ণ অভিমানের দৰ্পে অষ্ঠের প্রতি তৰ্জ্জনগর্জন করিয়া তৃপ্তিলাভের চেষ্টা করিব না । তুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমানে আমাদের এমন সময় আসিয়াছে, যখন নানা পীড়নে নানা তাড়নায় আমরা পরসংঘাতের বেদনা এক মুহুর্তের জন্তও ভুলিতে পারিতেছি না—এরূপ অবস্থা ব্যাধির অবস্থা । - এমন অবস্থায় আমাদের প্রকৃতি তাহার স্বাভাবিক ক্রিয়। সম্পন্ন করিতে পারে না । কিন্তু পরজাত বেদন ক্ষণকালের জষ্ঠ ভুক্সিয়া নিজের মধ্য আমরা যদি শান্তি ও প্রতিষ্ঠা অনুভব করিতে চাই, যদি নানা দুর্যোগের মধ্যেও আশার ধ্রুবতারাকে উজ্জ্বলকূপ দেখিয়া আমরা বুরলাভ করিতে ইচ্ছা করি, তবে এই সাহিত্যের । সন্মিলনই তাহার উপায়। যেখানেবেন,
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।