একাদশ সংখ্যা । ] কার্য্যে পরামর্শপূৰ্ব্বক হস্তক্ষেপ করা যায় না বটে, কিন্তু তাহার আয়োজনকাৰ্য্য একেবারে আমাদের আয়ত্ত্বাতীত নহে। ব্যাকরণ, অভিধান, ভাষাতত্ত্ব প্রভৃতি সংগ্ৰহ করা দলবদ্ধ চেষ্টার দ্বার সাধ্য। চেষ্টার স্বত্রপাত পূর্ব ইষ্টতেই হইয়াছে ; অনুকূল সময় উপস্তিত হইলেই এই উদ্যোগের গৌরব একদিন সকলের নিকট সুস্পষ্ট হইয়া ' উঠিবে এবং বঙ্গীয় সাহিত্যপরিষৎ যে স্বদেশের কত অন্তরঙ্গ ও সুন্তান্ত বহুতর লোকখাত মুখর অনুষ্ঠানের অপেক্ষ যে কত মহৎ এবং সত্য, একদিন তাহ নিঃসংশয়ে সপ্রমাণ হষ্টবে। আমাদের দেশের পুরাবৃত্ত, ভাষাতত্ত্ব, লোকবিবরণ প্রভৃতি সমস্তুই এপর্য্যন্ত বিদেশী পণ্ডিতেরা সংগ্রহ এবং আলোচনা করিয়া আসিয়াছেন। 據 বিদেশী বলিয় তাহাদের চেষ্টা অসম্পূর্ণ এবং ভ্রমসম্বুল হক্টতে পারে, এই কারণেই যে আমি আক্ষেপ করিতেছি, তাহা নহে। দেশে থাকিয়া দেশের বিবরণ সংগ্ৰহ করিতে আমরা * একেবারে উদাসীন, এমন লজ্জা আর নাই। ইহা আমাদের পক্ষে কত-বড় একটা গালি, তাহা আমরা অনুভব করি না । বেদনাসম্বন্ধে সংজ্ঞা না থাকা যেমন রোগের চরম অবস্থা, তেমনি যখন হীনতার লক্ষণগুলিসম্বন্ধে আমাদের চেতনাই থাকে না, তখনই বুঝিতে হুইবে, দুৰ্গতিপ্রাপ্ত জাতির এই লজ্জাহীনতাই চরম লজ্জার বিষয়। আমাদের দেশে এই একান্ত অসারতার ছোট-বড় প্রমাণ সৰ্ব্বদাই .দেখিতে পাই। বাঙালী হইয়া বাঙালীকে, পিতাত্ৰাতা-আত্মীয়স্বজনকে ইংরেজিতে পত্র সাহিত্যসন্মিলন। ૯૨૮ লেখা যে কত-বড় লাঞ্ছন, তাহ আমরা অনুভবমাত্র করি না ;—আমরা যখন অসংযত করতালিদার স্বদেশী বক্তাকে এবং হিপহপ হররে ধ্বনিতে স্বদেশী মান্তব্যক্তিকে উৎসাহ জানাষ্টয়া থাকি, তখন সেই কৰ্ণকটুবিজাতীয় বৰ্ব্বরতায় আমরা কেহ সঙ্কোচমাত্র বোধ করি না ;—যে সকল অশ্রদ্ধাপরায়ণ পরদেশীর কোনো প্রকার আমোদ-আহলাদে, সমাজরুত্যে আমাদের কোনোদিন কোনো আদর, কোনো আহ্বান নাই, তাহাদিগকে আমাদের দেবপূজায় ও বিবাহদি শুভকৰ্ম্মে গড়ের বাদ্য সহকারে প্রচুর মদ্যমাংস সেবন করানোকে উৎসবের তাঙ্গ বলিয়া আমরা গণ্য করি, ইহার বীভৎসতা আমাদের হৃদয়ের কোথাও বাজে না । তেম্নি আমরা আজ অন্তত বিশপচিশবৎসর পরের সিংহদ্বারে মুষ্টিভিক্ষার জন্ত-প্রতিদিন নিষ্ফলযাত্রা করিয়া নিজেকে দেশহিতৈষী বলিয়া নিঃসংশয়ে স্থির করিয়াছি, অথচ দেশের দিকে একবার ফিরিয়াও তাকাই না, ইহাও একটা সজ্ঞানকৃত প্রহসন। দেশের বিবরণ জানিতে, তাহার ভাষা, ভূগোল, ইতিবৃত্ত, জীবজন্তু, উদ্ভিদ, মনুষ্য, তাহার কথাকাহিনী, ধৰ্ম্মসাহিত্যসম্বন্ধে সমস্ত রহস্ত স্বচেষ্টায় উদঘাটন করিতে লেশমাত্র উৎসাহ বা কৌতুহল অনুভুব করি না। যে দেশকে আক্রমণ করিতে হইবে, সে দেশের সমস্ত তথ্যানুসন্ধান করা শত্রপক্ষের কত আবগুক, তাহ আমরা জুনি; আর যে দেশের হিতসাধন করিতে হইবে, সেই দেশকেই কি জানার কোনো প্রয়োজন নাই ? কিন্তু প্রয়োজনের কথা কেন তুলিব ? যাহার দেশ শাসন করেন,তাহার প্রয়োজনের . গরজে দেশের বৃত্তান্ত সংগ্রহ করেন; আর
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।