একাদশ সংখ্যা । ] ইহাই আমার ইচ্ছা—কারণ ধাৰ্ম্মিক ব্যক্তির মনও বিচলিত হইতে পারে, কিন্তু ইক্ষাকুংশের নিয়মানুসারে জ্যেষ্ঠপুত্রই রাজ্যের অধিকারী, সুতরাং এই আশঙ্কা তাহার মনে কেন হইয়াছিল, তাহার অন্য কোন ব্যাখ্যা আমরা ভাবিয়া পাই না। পূৰ্ব্বপ্রতিশ্রুতির ভয়েই হয় ত তিনি অশ্বপতিকে ও জনকরাজাকে নিমন্ত্ৰণ করিলেন না। রামচন্দ্রকে বলিলেন—“ইহাদিগকে এখন নিমন্থণ করিবার প্রয়োজন নাই।” • শ্বশুরমহাশয় যদি উপস্থিত হইয়া পূৰ্ব্বপ্রতিশ্রুতিপালনের জন্ত বাধ্য করেন, তবে রাজর্ষি বৈবাহিক স্বীয় জামাতার ভাবিশুভকামনায়ও কখনই দ্যায়পথ হইতে বিচলিত হইবেন না—দশরথের মনে বোধ হয় এইরূপ আশঙ্কার উদয় হইয়া থাকিবে । এই অভিষেকব্যাপারে একটা স্থানে ছিদ্র ছিল, তাহ যে কোন-প্রকারে পূরণ করিয়া দশরথ দ্বিধাকম্পিতভাবে ত্রস্ততার সহিত এই কার্য্যে অগ্রসর হইয়াছিলেন । কিন্তু কৈকেয়ী সেই প্রতিশ্রুতির কথা জানিতেন না, সুতরাং রাজার মুনে তৎপ্রতি কোন সন্দেহের উদয় হয় নাই । কৈকেয়ী বারংবার মন্থরার সমস্ত আশঙ্কার কথা হাসিয়া উড়াইয়া দিয়াছিলেন, কিন্তু দুইটি কথায় তাহার মনে সন্দেহ অঙ্কুরিত হইয়া উঠিল। 象 প্রথমটি।–“ভরতকে রাজা মাতুলালয়ে ফেলিয়া রাখিয়াছেন কেন? এরূপ ব্যাপারে তাহাকে আনিবার চেষ্টা না করা অস্বাভাবিক, শত্রুঘ্ন ভরতভক্ত—তাহাকেও তিনি দুরে , প্লাথিয়াছেন। কণ্টকাকীর্ণ তরুকে যেরূপ কাঠুরিয়া ছেদন করিতে যাইয়াও বাধা পাওয়ার কৈকেয়ী। ¢8ტ আশঙ্কায় ফিরিয়া আসে, সেইরূপ শক্রয় উপস্থিত থাকিলে রাজা নানাপ্রকার ভয়ে এই কাৰ্য্য হইতে বিরত হইতেন ; রাজার মন যদি উদার হইত, তবে কখনই তিনি কণ্টকুের হায় ইহাদিগকে এসময়ে দূরে রাথিতেন না।” পূৰ্ব্বে উক্ত হইয়াছে, রাজার এই কাৰ্য্যের মধ্যে দ্যায়পরতার অভাব ছিল, সুতরাং এই যুক্তি কৈকেয়ীর হৃদয়ে সন্দেহের উদ্রেক করিল। ब्रिडीग्राई। - “তুমি কৌশল্যাকে চিরকাল নানাভাবে * উৎপীড়ন করিয়াছ, তাহার পুত্র অভিষিক্ত হইলে তিনি প্রতিশোধ তুলিতে অবশ্যই সচেষ্ট হইবেন, অযোধ্যা তখন তোমার কণ্টকশয্যা হইবে।” মন্থরার অপরাপর নানাপ্রকারের যুক্তি ছিল, কিন্তু এই দুইটি কথায় সম্ভবত কৈকেয়ীর মনে প্রকৃত আশঙ্কার উদ্রেক করিয়াছিল। এইরূপ সমারোহপূর্ণ বিশেষ ব্যাপারে পুত্রদ্ধয়কে দেশান্তরে রাখিয়া ব্যস্ততার সহিত কেন এই অভিষেক সম্পাদন করিতে প্রস্তুত .ইইয়াছেন, কৈকেয়ী ইহার মীমাংসা করিতে পারিলেন না। এই কথায় তাহার হৃদয়তন্ত্রী • সহসা একটা উৎকট ঝঙ্কারে বাজিয়া উঠিল। দ্বিতীয় কথাটিতেও আত্মদোষজনিত আশঙ্কা জাগ্রত হইয়াছিল। র্যাহার পুতি তিনি চিরদিন অত্যাচার করিয়াছেন, তিনি সুবিধা পাইলে প্রতিশোধ তুলিতে বিরত হইবেন—এ কথা তাহার বিশ্বসনীয়-বোধ হইল না। -- এই দুইটি কথায় তাহার ভিতরের কোপন, আত্মমুখপ্রিয় প্রবৃত্তি জাগ্রত হইয়া উঠিল। চিরকাল যিনি জুগৎকে স্বীয় মুখের ক্রীড়নক বলিয়া মনে করিয়াছেন, যাহার চক্ষের কুটিল, কটাক্ষে প্রধান মহিষী সৰ্ব্ব ‘বিচলিত
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৫৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।