১৯২ প্রবাহবৎ যে উদাম চিন্তা এবং উচ্ছ জ্বল ভাবস্রোত বঙ্গে তখন হইতে দেখা দিয়াছিল, তাহার আবিলতা এখনও সম্পূর্ণ কাটে নাই। বঙ্গীয় যুবকদের সাধারণ রীতি এবং চরিত্র ইহার প্রমাণ ২ বঙ্গকুলললনাদের সম্বন্ধে তেমন নিঃসংশয়ে কিছু বলা চলে না। তবে পাশ্চাত্যসভ্যতার দুৰ্গমনীয় প্রভাব যে অল্পবিস্তয় তাহাদিগকেও চঞ্চল করিয়া তুলিয়াছে, ইহা অস্বীকার করার জো নাই। দেখিয়া-শুনিয়া বর্ষীয়ান হিন্দু সমাজহিতৈষীরা প্রমাদ গণিতেছেন। তাহদেব ভিতর অনেককে বলিতে শুনিয়াছি, সেকালের ও একালের স্ত্রীচরিত্রের একটা সামঞ্জস্তবিধান করিতে পারিলে এই স্রোত ফিরিতে পারে । কিন্তু ইহা কি সম্ভব ? த মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবীর জীবনে সেকাল ও একালের হিন্দুমহিলাচুরিত্রের একটা সমন্বয়চেষ্টা দেখা যায়। ছত্রিশবৎসরমাত্র বয়সে তিনি স্বর্গারোহণ করিয়াছিলেন। ইহার ভিতর যে জীবন তিনি যাপন করিয়াছিলেন এবং যে সকল কাৰ্য্য তাহার দ্বারা অনুষ্ঠিত হইয়াছিল, তাহাতেই এই সামঞ্জস্ত সম্পূর্ণ সম্ভবপর বোধ হয় । শ্রাবণমাসে একদিন বেলা ১১টার সময় রাজবাড়ীতে গেলাম। মহারাণীমাতাকে প্রণাম করিতে গিয়া দেখি, ছোট-তরফের পুরাতনবাটীর কোন স্থান হইতে একটি শালগ্রামশিলা পাওয়া গিয়াছে, তিনি তাহার পবিত্রীকরণ লইয়া ব্যস্ত । তাহার ঘরের বাহির “হলে” পুরোহিতমহাশয় পাজিপুথি লইয়া সেই-সম্পৰ্কীয় ব্যবস্থা নির্ণয় করিতেছেন। মহারাণী • অন্তরাল হইতে বঙ্গদর্শন । { ৭ম বর্ম, শ্রাবণ, ১৩১৪ অন্তের দ্বারা তাহাকে অনেক প্রশ্ন করিলেন। শেষে স্থির হইল, শিলাটি ছোট-তরফের ঠাকুরবাড়ীতেই রাখা হইবে । মা বলিলেন, যখন ছোটবাড়ীতে পাওয়া গিয়াছে, তখন ইহা নিশ্চয় যে, উহা রাজসংসারেব ঠাকুর, অন্তের নহে। প্রতি পদে তিনি আশঙ্কা করিতে. ছিলেন, পাছে ইহাতে কোন অধৰ্ম্ম স্পর্শে। স্বৰ্গীয় রমেশচন্দ্র মিত্র মহাশয়ের প্রধান. বিচারপতিপদে উন্নীত হওয়ার খবর প্রচার হইলে বঙ্গেব সৰ্ব্বত্র সভাসমিতি হইয়াছিল। পুটিয়ায় সেজন্য আনন্দোংসব হইল। উদ্যোনীরা র্তাহার মুহুমতি লষ্টতে গিয়া শুনিলেন, মান্ত তদুপলক্ষে কতকগুলি ভদ্রলোককে একদিন রাজবাড়ীতে নিমন্থণ করিতে ইচ্ছা করিয়াছেন। কোন আত্মীয়ের গৃহ হইতে একদিন প্রাতে প্রাচীন এক পরিচারিক তাহাকে দেখিতে আসিল । মা, কোন অল্পবয়স্ক আত্মীয়া কি করিতেছে, তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন । উত্তর-“প্রাতে দেখিয়া আসিয়াছি, লষ্ট লইয়! বসিয়াছেন, বলিলাম—“কুকি, বইয়ের জল কত হয়েচে, আবার ” ইহাতে তাহার স্বামীর স্ত্রীশিক্ষার প্রতি বিবাগের কথা উঠিল । "বালিকার পাঠের জন্য কি কি বই আনাইয় দেওয়া যাইতে পারে, মাত আমীয় সুধাইলেন। . আমি “মেজ বউ”, “সুরুচির কুটার” এবং "বঙ্গমহিলা”র নাম করিলাম। স্ত্রীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তাসম্বন্ধে তাহার ধারণা এরূপ বলবতী ছিল যে, কেহ তাছাতে সংশয়প্রকাশ করিলে তিনি বিস্থিত হইতেন । পুটিয়ার আমি একবার বালিকাবিদ্যালয়সংস্থাপনের চেষ্টা করিয়াছিলাম। স্থানীয় ভদ্রলোকদের সহায়তাগ্রাপ্তি দূরে থাকুক, অনেকেই তাহতে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/১৯৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।