চতুর্থ সংখ্যা । ] রাজতপস্বিনী । ᎼᏜ© খড়গহস্ত হইয়াছিলেন । কেবল মহারাণীমাতার উৎসাহ ও সহানুভূতির বলেই আমি তাহাতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলাম। রাজবাটীতে বিস্তর ইংরেজী বাঙল। সংবাদপুত্র আসিত। আমি মহারাণীমাতার নিকট প্রস্তাব করিলাম, রাজবাড়ীর বাহিরে একটি ঘরে সেগুলি রক্ষুিত হইলে সাধারণের পড়াশুনার সুবিধা হইতে পারে। মাতা ইহার অনুমোদন করিয়া কৰ্ম্মচারী ও দ্বারবান নিযুক্ত করিয়া দিলেন এবং সেই পাঠাগারে তাহার সমস্ত পুস্তক দান করিবার অভিপ্রায় প্রকাশ করিলেন । মাঝে মাঝে তিনি কথাপ্রসঙ্গে মামাদিগকে ব্রহ্মসমাজের সংবাদ জিজ্ঞাসা করিতেন । ব্রাহ্মধয় কি, তাহার কল্পটি সম্প্রদায়, কোন সম্প্রদায় i. কাজ করিতেছে ? ধৰ্ম্ম এবং সমাজ সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতির আলোচনাও সাধারণ সমাজের লক্ষ্য শুনিয়া আগ্রহে তিনি অনেক প্রশ্ন করিয়াছিলেন । বলা বাহুল্য, উপনিষদের প্রতিপাদ্য ব্রহ্মবাদ স্বভাবতই তাহাকে বেশ আকৃষ্ট কল্পিত । একদিন প্রাতে মাতা সংবাদপত্র পাঠ করিতেছিলেন, তাহার শিশু ভগিনীপুত্র কাছে বসিয়া দুঃমি করিতেছিল । তাহার চাপল্যে মা ঈষৎ বিরক্ত হইলেন । বলিলেন, “ছি কোকন ? আমি বলিলাম, “ম। আপনি উহ নির্ধারণ করিতে পরিবেন না, আর ছেলেবেলায় একটু দুষ্টামি ভাল, বরং ঐ অবস্থাতেই সুখে মুখে সব শিথাইতে হয় । আমিও বোধ হয় ঐক্ষপ কত আপনাকে বিরক্ত করতাম।” মা বলেন, “ন, তুমি বেণশাস্তছিলে।” প্রাচীন গণতা দাসী মাকে ব্যঞ্জন করিতেছিল, বেশী কথা কহা তাহার স্বভাব নহে, মৃদুভাবে বলিল, “ন, আপনি বড় স্ববুদ্ধি ছিলেন, আমরা সকলে কোলে লইতাম।” এই দাসী মহারাণী ও তাহার ভগিনীকে মানুষ করিয়াছিল। সে বলিত, মা ছেলেবেল হইতে তাহার উপর কখন রাগ .করেন নাই। কোকনের আমার প্রতি বালকসুলভ অসংখ্য প্রশ্ন শুনিয়া মা খবরের কাগজ পড়িতে পড়িতে ঈষৎ হাসিতেছিলেন। কথায় কথায় আমি জানাইলাম যে, পদচ্যুত গুইকুমারের মৃত্যু হইয়াছে। মা বলিলেন, “র্বাচিয়াছেন ! আহ, কার • কপালে কি হয়, বলা যায় না !” জিজ্ঞাসা করিলেন, “কিসে পড়িলে?" আমি—“ইংলিশম্যানে।” মাতা—“সোমপ্রকাশে পড়িতেছিলাম যে, গুইকুমার সংশয়াপন্ন কাহিল ।” তার পর আমার মুখে ঢাকায় আত্মশাসনের সভা উপলক্ষে বিশহাজার লোক সমবেত হওয়ার কথা শুনিয় তিনি আশ্চর্য ও আনন্দিত হইলেন । একদিন যাত্রাগানের কথা হইতেছিল। আমরা উহাব কৃত্রিমতা লইয়" কঠোর সমালোচনা করিতেছিলাম। কেহ বা কালুয়াভুলুয়ার সংএব কথায় নিন্দ করিতেছিলেন। মা বলিলেন, “সে খারাপ, কিন্তু বাসুদেব আমাদের ভাল লাগিত, এখন তা নাই ।” আর একদিন একটা বিবাহের সম্বন্ধের কথা হইতেছিল। পাত্রীর পিতামহ, মহা । কুলীন কিন্তু দরিদ্র ও গণ্ডমূখ পাত্র স্থির করিতেছিলেন, পিতা এবং অন্তান্ত আত্মীয়দের তাহাতে অমত। সকল শুনিয়া মহারাণ মাতা শেষোক্তদের বলিলেন, “তোমাদের বুঝি ইচ্ছা যে, মেয়েটি যেখানে মুখে থাকে, সেইখানে বিবাহ দাও ? সেই ত ভাল ” • ।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/১৯৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।