পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বের পরিণাম । কিছুদিন হইতে আধুনিক বৈজ্ঞানিকদিগের মনে একটা, ভয়ানক আতঙ্ক আসিয়াছে,— বুঝি বা বিশ্বের শক্তি ক্রমেই নিশ্চল ও অক্ষম হইয়া আসিতেছে। শক্তির ধ্বংস নাই বলিয়া আধুনিক বিজ্ঞানে যে একটা কথা আছে, তাহা অতি সত্য । বিশ্বরচনাকালে বিধাতা যে শক্তি দিয়া তাহার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, কাহারে সাধ্য নাই, তাহার অণুমাত্র. ক্ষয় করে। তুমি একখণ্ড ইট লইয়া দূরে ছড়িয়া ফেলিলে। হয় ত মনে করিলে, তুমি একটা শক্তির সৃষ্ট করিয়া, তাহার দ্বারাই ইটখানিকে সচল করিয়া দিলে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তাহ নয়, ব্ৰহ্মাণ্ডের বিশাল শক্তিরাশির যে এক অতি ক্ষুদ্র অংশ তুমি আহাৰ্য্যা: দির সহিত দেহস্থ করিয়াছিলে, তোমার দেহ তাঙ্গাই ইষ্টকখণ্ডে প্রয়োগ করিয়াছিল। ইঃরু আবার সেই শক্তির কতক অংশ বাতাসের ঘর্ষণে তাপ উৎপন্ন করাইয়া এবং মাটিতে আঘাত দিয়া তাহাকে একটু গরম করাইয়া নিশ্চল ইষ্টয়া গেল। সুতরাং ইট চুড়িয়া তুমি যে শক্তিকে মিছামিছি নষ্ট করিলে বলিয়া মনে • করিতেছ, সত্য কথা বলিতে গেলে তাহা নষ্ট হইল না। বাতাস ও মাটিকে গরম করিয়া সেই শক্তিই আবার কতকগুলি নুতন ੇ। মুরু করিয়া দিল । • বলা বাহুল্য, ঐ টিল-ছোড়া বিশ্বের বিচিত্র শক্তিলীলার একটা তুচ্ছ উদাহরণ। কিন্তু মেঘবৃষ্টি, জন্মমৃত্যু, ক্ষয়বৃদ্ধি ইত্যাদি ব্ৰহ্মাণ্ডের খুব বড়-বড় কাজগুলাও ঐ টিল-ছোড়ার মতই চলিয়া থাকে। সকলেই বিশ্নের ভাণ্ডার হইতে একএকটু শক্তি সংগ্ৰহ করিয়া, এবং তাঁহাকেই নানাপ্রকারে পরিবর্হিত করিয়া প্রকৃতির বিচিত্র লীলা দেখায় । ইহাতে শক্তির ব্যয় হয় বটে, কিন্তু ধ্বংস হয় না। এক আধার ত্যাগ করিয়া আধারান্তরে পৃথক আকারে আশ্রয়গ্রহণ করাই শক্তির কাজ। - বৈজ্ঞানিকগণ আশঙ্কা করিতেছেন, সম্ভবত দূর ভবিষ্যতে বিশ্বের এই শক্তিলীলার অবসান হইবে। আশঙ্কাটির কারণ কি, এখন আলোচনু করা যাউক । আমরা যখনি শক্তি আহরণ করিয়া তাহার দ্বারা কাজ করাইয়া লই, শক্তির অতি অল্প অংশই সেই কাজে ব্যয়িত হয়, অবশিষ্টট নানাপ্রকারে তাপে পরিণত হইয়া পড়ে। মনে করা যাউক, কয়লা পোড়াইয়া ও তাহীর অস্তর্নিহিত শক্তিকে মুক্ত করিয়া, আমরা রেলগাড়ি চালাইতে যাইতেছি । এই শক্টির সমস্তটা কখনই গাড়ি চালাইবার কাজে ব্যয়িত হইবে না। অধিকাংশই রেল ও চাকায় সংঘর্ষণ করাইয়া ও নানাপ্রকার শব্দের তরঙ্গ তুলিয়া অনাবশুক তাপে পরিণত হইয়া পড়িবে। তাপ উৎপন্ন হইলে তাহাকে এক নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ রাখা বড় সহজ ব্যাপার নয় । পাশ্বের শীতল পদার্থকে গরম করিয়া সকলকে সমভাবে উষ্ণ রাখিবার জন্ত তাপমান্ত্রেরই এক প্রবল চেষ্টা দেখা যায়। জল যখন উচুস্থান থাকে, কেবল তখনি মীট আসিবার জন্ত