রাজতপস্বিনী । [ জীবনীপ্রসঙ্গ ] মহারাণী শরৎসুন্দরী দেবীর চরিত্রে যে সকল দেবোপম গুণ সহজাত সংস্কারেব মত মজ্জাগত হইয়া গিয়াছিল, সম্পূর্ণ আত্মবিসৰ্জ্জন এবং অসাধারণ সহিষ্ণুতা তাহাদের অন্ততম । বৈষয়িক ব্যাপারে অনেক সময়ে ইদানীং. তিনি নিজে কিছু করিতেন না।--তাহার নামে কুমারমহাশয় “এবং কোম্পানির” আদেশই চলিয়া যাইত। ইহাতে অনভিজ্ঞ লোকের না বুঝিরা তাহার বৈষয়িক বুদ্ধির দোষ দিতেন । কিন্তু এই সময়ে আপনার সকল স্বাৰ্থ বলি দিয়া, রাজকাৰ্য্যে মিজের অস্তিত্ব পর্যন্ত মুছিয়া ফেলিতে যে দুর্লভ মানসিক শক্তির পরিচয় নিত্য র্তাহাকে দিতে হইত, যথার্থই তাহ বিস্ময়কর । তাহাই প্রকৃত বীরত্ব—এবং স্ত্রীপুরুষনিৰ্ব্বিশেষে অমুদিন চারিত্রপুঞ্জার নিদানীভূত । একদিন রাজান্তঃপুরে গিয়া দেখি, মাতা কতকগুলি কাগজে দস্তখত করিতেছেন, র্তাহার বাল্যকালের শিক্ষক বুদ্ধ ঈশান সেন মহাশয় তাহাতে মোহরের ছাপ দিতেছেন। কি কথায় মহারাণী বলিলেন, “কেহ আমার মোহর লইয়া কোন অনিষ্ট করিবে, এ সন্দেহ কেন বা আমার মনে স্থান পায় না। আমার মোহর ঈশান সেন আমার সাক্ষাতে রাজস°সারের অসাক্ষাতে এ-বাড়ীতে এবং ও-বাড়ীতে করিয়া থাকে। সে-বার কে একজন জালিয়াং এই মোহব জাল করিয়া • • ও * * এর নাম করিয়াছিল ।” ফলতু সকলের প্রতিবিশ্বাস তাহার জীবনের অন্নপান ছিল। দুঃখের বিষয়, কাহারও কাছারও ব্যবহারে সেই বিশ্বাস শেষের দিকে কিঞ্চিং কুঞ্জ হইয়াছিল। মাতা সাংসারিক-বৈষয়িক সকল কথাই আমায় বলিতেন। কুমারের দলের প্রধান কোন ব্যক্তির কথার একদিন আমি বলিলাম যে, “তার কথাবার্তা শুনিয়া বোধ হয় যে, উক্ষেপ্ত ভাল, তবে বুঝিতে ন পারিয়া যা করুন।” মা বলিলেন যে, “পূৰ্ব্বে আমি বড় বিশ্বাস করিতাম, কিন্তু * * * হইতে বিশ্বাস একেবারে গিয়াছে। হিতকারী হইতে পারে, কিন্তু আমার অহিতকারী । খালিসার সেলামী তহবিল যে আমার হাত হইতে লওয়া হইল, উহার পরামর্শ ব্যতীত তাহ হইতে পাতি না। • • • আমার ক্ষমতাশূন্ত করা তাহার ইচ্ছ, তাহ সফল হইয়াছে।” তাছার অমুগত চির-উপকৃতের পৰ্য্যন্ত মহারাণীকে বিপদগ্রস্ত করিতেছে বুঝিয়া আমি বড় দুঃখিত হইলাম। ববিলাস্ট
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/২৬৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।