পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বক্তৃমধ্যে গ্রহণ করিতেছেন দেখিয়া তার এক । হালক একবার সেরূপ সাহেবি আনায় ধিক্কার দিলে সহাস্তে তিনি বলিয়াছিলেন, “ওটা অভ্যাস করতে হয়েচে হে ।” ফলত রংটুকু ছাড়া আর কিছুতেই তাঁহাকে চিনিবার তেমন উপায় ছিল না । চাকরদের উপর আদেশ ছিল, তাহাকে ভুলিয়াও কেহ বাবু বলিবে না,সাহেব বলিবে r- যদি কখন কাহারও সে মারাত্মক ভ্রম হইত, চক্রবত্তিসাহেব তাঞ্জাকে ক্ষমা করিতে পারিতেন না । এইরূপে এবৎসর কাটিয়া গেল এবং ইহার মধ্যে, রাজকুমারবাবুর ২৩টা প্রোমোশন হওয়ায় আয়ও বেশ বৃদ্ধি হইল। কিন্তু সাহেবি-আনারূপ যজ্ঞে যে স্বর্ণরৌপ্যের আহুতির প্রয়োজন, এদেশে সচরাচর চাকুরীব্যবসায়ীর পক্ষে তাহার যোজনা সাধ্যের শ্লীম ছাড়াইয়া উঠে। রাজকুমার ক্রমশ ঋণজালে জড়িত হইতে লাগিলেন এবং “দ্যাম্পেন্‌ ডিনারের” মাত্রাতিশযে তাহার যকৃতের পীড়াও দেখা' দিল। ডাক্তারের বলিল, তিনি অতঃপর পানাহারসম্পর্কে সংযত না হইলে শীঘ্রই ব্যারামটি দুরারোগ্য হইয়া উঠিবে। २ রাজকুমারকুনেকগুলি সন্তান জুন্সিয়াছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত প্রথম কন্যা ও একটি পুত্র.সন্তান ছাড়া সকলেই অকালে ইহলোক ত্যাগ করিয়া গিয়াছিল। লীলা ও মুকুমার ঠিক ফিরিদা মেরেছেলের মত লালিতপালিত হইতে-' ছিল এবং পিতার কঠোর শাসনে চাকরবাকরদের সঙ্গে হিন্দী ছাড়া কখন বাঙুল বঙ্কিতে পাইত না। চারুবার স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে খানিকটা মেম হইয়া গেলেও তাহার এ সৰ বাড়াবাড়ির অনুমোদন করিত না এবং মাঝে মাঝে গঙ্গাস্নান ও কালীঘাটে পুজাদান চক্ৰবৰ্ত্তিসাহেবের চক্ষুশূল হইলেও তাহার দ্বারা সম্পাদিত হইত। “লিলি” পঁচিবৎসর বয়সে লোরেটোবিদ্যালয়ে প্রবেশ করিয়া দশবৎসর পর্য্যন্ত বরাবর সেখানে ইংরেজী ও ফরাসী ভাষা শিক্ষা করিয়াছিল। দেশীয় কোনরূপ শিক্ষার প্রতি মনোনিবেশ করা যে কৰ্ত্তবা, তাহা রাজকুমারবাবুর বা তার পত্নীর মনে হইত না । কিন্তু যকৃতের পীড়াটা ক্রমশ বৃদ্ধি হওয়ায় যখন চিকিৎসকদের পরামর্শে দীর্ঘ ছুটি লওয়ার, প্রয়োজন হইল, তখনই উভয়ের জ্ঞানচক্ষু প্রথম উন্মীলিত হইল। রাজকুমার তার এক হিন্দুভাবাপন্ন বাল্যবন্ধুর গৃহে কতকগুলি সংস্কৃত, ফারসী ও বাঙলা মহাজনবচনাবলী কাপেটের অক্ষরে সুন্দর ফ্রেমে বাধীন ছবির মত লম্বিত দেখিয়াছিলেন। একচিতে লেখা ছিল—“ঐস দিন নেহী রহেগা " . ব্যাধিক্লিষ্ট এবং আকণ্ঠঋণমজ্জিত _t৭ম বধ বৈশাখ, ১৩১৪ ‘রাজকুমার সে কথা মনে করিয়া অশ্রমোচন করিলেন। জীবনে অনেক শিক্ষা হয়, কিন্তু ঠিক সময়ে যদি ইহঁত! ছুটির প্রথমবর্ষ শেষ হওয়ার পূৰ্ব্বেই তিনি দেহত্যাগ করিয়া গেলেন। এবং তার যে সব মূলধা ব্যবহারের জিনিষ ছিল, দেখিতে দেখিতে cनाब मात्छ সবই বিক্রয় হইয়া গেল। রাজকুমারবাবুর স্ত্রী চারুবালা ইহার বহুপূৰ্ব্বে পিতৃহীন হইয়াছিলেন। এই অভাবনীয় দুস্থ অবস্থায় তিনি ভাইদের আশ্রয় লইয়া কষ্টে দিন কাটাইতে লাগিলেন। লীলার বয়ঃক্রম ত্রয়োদশ উত্তীর্ণ হইয়াছিল, বিবাহ