4. একটা পুরাতন প্রাসাদের উপরিভাগে, ধুতিকাপড়ে আচ্ছাদিত ৫৬জন লোক উবু হইয়৷ বসিয়া আছে, ঐ সন্ন্যাসীর মত উহারাও অনন্তমনে ঐ দিকে তাকাইয়া রহিয়াছে । উহার ঐ মৃতদিগের ত্বাত্মীয়জন ; বিশেষত উহাদের মধ্যে দুইজন, যাহাদের দেহ বাৰ্দ্ধক্যে নত হইয়া পড়িয়াছে, উহারা—তিনটা চিগর মধ্যে যেটি সৰ্ব্বাপেক্ষ ছোট ও গরিব-ধরণের, সেইটির দিকে আকুলভাবে তাকাইয়া রহিয়াছে। আমার হিন্দুমাঝি বলিল, “ওটি দশবৎসরের একটি ছোট ছেলে,—উহাকে পোড়াইবার জন্ত - উহারা খুব অল্প কাঠ জানিয়াছে।” ঐ চিতা হইতে ধূমরাশি উখিত ‘ হইয়া ঐ অচলমূৰ্ত্তি লোকগুলার দিকে ধাবিত হইল। যাহারা দাহ করিতেছিল, তাহদের মধ্যে দুইজন একটা অতীব কদৰ্য ন্তাকুড়া কটিদেশ হইতে টানিয়া-লইয়া চিতায় ক্রমাগত বাতাস দিতে লাগিল—ক্রমে চিতাটা ধোয়াইলত আরম্ভ করিল ; এইবার উহাদের শিশুটির দেহ ভস্মসাৎ হইবে। এবং চতুর্দিকের এই সমূন্ত মন্দিরপ্রাসাদাদি—যাহ। . কুয়াসাচ্ছন্ন আকাশ ভেদ করিয়া উৰ্দ্ধে উঠিয়াছে, উহার সদর্প ঔদাস্তসহকারে ও পরমনিৰ্ব্বিকারচিত্তে এই ' শ্মশান-কোণটির উপর দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া দরিদ্র শবের বিলম্বিত দাহকাৰ্য্য অবলোকন করিতেছে—সেই শ্মশান, যেখানে সমস্ত রক্ত মাংসের শেষ হয়, মৃত্যুতে সমস্ত দুঃখকষ্ট্রের অবসান হয়। 纖 এই সময়ে, বিরাটুসোপানাবলীর শীর্ষদেশে, চিতার আর একটি নুতন অহুতি আসিয়া উপস্থিত হইল ; এই পঞ্চম শবট, ঐ” উপরের একটি ছায়াময় সূক্ষপথ হইতে বাহির হইয়া दंत्रार्थन । [ ৭ম বর্ষ, জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৪ এই বৃদ্ধ গঙ্গার অভিমুখে আসিতেছে ; উহারও ভম্বরাশি গঙ্গায় নিক্ষিপ্ত হইবে। ভুলির আকারে বাশের কতকগুলা শাখা পাশাপাশি বাধা, তাহার উপর শবটি রহিয়াছে ; ‘ট্যানপরা’ অৰ্দ্ধনগ্ন ছয়জন লোক উহাকে লইয়া . আসিতেছে। শবের পা সম্মুখে বাহির হইয়া রহিয়াছে এবং পথটা এত বেশী ঢালু যে, মনে হইতেছে যেন শবটা প্রায় খাড়া হইয়া রহিয়াছে। কেহই অমুগমন করিতেছে না, কেহই কাদিতেছে না । কতকগুলি বালক, যাহারা স্নানের জন্ত নীচে নামিতেছে, তাহারাও যেন উহাকে দেখিয়াও দেখিতেছে না, উহাৰ চতুর্দিকে উৎফুল্লভাবে লাফালাফি করিতেছে। বারাণসীতে আত্মাই শুধু ধর্তব্যের মধ্যে ; তাই আত্মা চলিয়া গেলে যাহ অবশিষ্ট থাকে, তাহাকে তৎক্ষণাৎ বিযুক্ত ও অপসারিত করা হয়। প্রায় দরিদ্রেরাই শবের সঙ্গে সঙ্গে শ্মশানে আইসে ; তাহদের ভয় হয়, পাছে দাহের জন্ত কাঠে ন কুলায় এবং পাছে দাহের পর দাহকেরা .শবের অদগ্ধ অংশ গঙ্গায় নিক্ষেপ করে । 馨 বড়-বড় উজ্জ্বল নক্যা-কাটা একটা লাল মলমলাস্ত্রৈ" এই শবের দেহ আচ্ছাদিত ; এবং উহার কটিদেশে কতকগুলা শাদ ও লাল ফুল গোজা । ইহা একটি রমণীমূৰ্ত্তি, প্রথমত এই পুষ্পসজ্জাতেই তাহ জানা বার ; তা ছাড়া, মৃত্যুর হিমময়-বিকৃতাবস্থা-সত্বেও পাতলা কাপড়ের ভিতর দিয়া উহার নারীসৌন্দর্য্য দিব্য প্রকাশ পাইতেছে! আমার মাঝি বলিল— “উনি একজন ধনিলোকের মেয়ে ; দেখ না, ওর জন্য কেমন খালী কাঠ আন হয়েছে।” এই শবের দাহ দেখিবার প্রতীক্ষায়, এই
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/৬৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।