ہ ہذا তলে যাতায়াত করিতেছে ; এবং প্রত্যেক - মন্দিরচুড়ায় একএকটা বিশেষ ঝাক আছে, তাহারা সেই চুড়ারই চতুৰ্দ্দিকে ঘোরপাক দিয়া চক্রাকারে উড়িয়া বেড়ায়। নদীসমুথিত কুয়াস ক্রমেই ঘনাইয়া আসিতেছে, সন্ধ্যাবায়ু ক্রমেই শীতল হইয়া আসিতেছে এবং গলিত, দ্রব্যাদির দুর্গন্ধে ভারাক্রান্ত হইয় উঠতেছে। সেই নবযৌবন দেবীমূৰ্ত্তির চিতারোহণ দেখিবার জন্য আরো কিছুক্ষণ আমার এখানে থাকিবার ইচ্ছা ছিল ; কিন্তু তাহা হইলে অনেক বিলম্ব হইবে ; তা ছাড়া, বিশ্বাসঘাতক ঐ লাল বস্ত্রখণ্ড দেবীর সমস্ত দেহ্যষ্টিকে এমনভাবে অনাবৃত করিয়া রাখিয়াছে যে, দেখিতে বড়ই সঙ্কোচবোধ হয় ; এ সময়ে এতটা দেখা একপ্রকার দেবাবমাননা ;–কেন না, উনি এখন মৃত। না, যখন দ্বাহের সমৃত্যু হইবে, বরং সেই সময়ে, একটু পরে আবার এখানে আসিব। এখন এখান হইতে যাওয়া ' যাক্ । কি অক্লান্ত-প্রলয়ঙ্কর এই গঙ্গা ! কত প্রাসাদ ইহার স্রোতে চুৰ্ণবিচূর্ণ হইয়া গিয়াছে! প্রাসাদসমূহের সমগ্ৰ মুখভাগ স্খলিত হইয়া অটুটভাবে নীচে নামিয়া আসিয়াছে এবং অৰ্দ্ধনিমজ্জিত হইয়া ঐখানেই রহিয়া গিয়াছে। আর এখানে দেবালয়ই বা কত ! নীচেকার যে সকল মন্দির নদীর খুব ধারে, উহাদের চূড়াগুলা ইটালীর পিজা’-স্তম্ভের ন্যায় ঝুকিয়া রহিয়াছে এবং উহার মূলদেশ এরূপ শিথিল হইয়া গিয়াছে ফুে, প্রতিবিধানের কোন উপায় নাই। কেবল উপরের মন্দিরগুলা প্রস্তররাশির দ্বারা—-সৰ্ব্বকালের রাণীকৃত পাষাণভিত্তির দ্বারা সংরক্ষিত হওয়ায়, উহাদের রক্তিম চুড়াগ্রভাগ बन्नुअिन। s ৭ম বর্ষ, ੋਏ, >ー)〉8 কিংবা সোনালী চুড়াগ্রভাগ এখনো সিধা রহিয়াছে এবং আকাশ ভেদ করিয়া, উৰ্দ্ধে উঠিয়াছে, এবং এই প্রত্যেক চুড়ার সঙ্গে এক-এক বৰ্ণক কালে পাখীও রহিয়াছে।– খুটিনাটি করিয়া দেখিতে গেলে, এ দেশের এই মন্দিরচুড়াগুলার আকারে একপ্রকার রহস্যময় ভাব দেখিতে পাওয়া - যায়। আমি ইতিপূৰ্ব্বে আমাদের “গোরস্থানের বৃহৎ ঝাউগাছের” সহিত ইহার তুলনা দিয়াছি, কিন্তু কাছে আসিয়া দেখিলে আরো অদ্ভূত বলিয়া মনে হয় ; ইহা যেন বাণ্ডিলের মত বাধা ছোট-ছোট চুড়ার সমষ্টি, ছোট-ছোট অসংখ্য একইরকমের জিনিষ, ইহার এই অপরিবর্তনীয় আকার শতশত বৎসর হইতে সমান চলিয়া আসিতেছে। আমাদের পাশ্চাত্য বাস্তুবিদ্যার পরিজ্ঞাত কোন-কিছুরই সহিত ইহার সাদৃশু । নাই । এক্ষণে বারাণসীর সমস্ত ব্রাহ্মণমণ্ডলী এই গভীরসলিলা নদীর ঘাটে আসিয়া সমবেত হইয়াছে ; তীরে বাধা ছোটছোট অসংখ্য ডিঙীনৌকা উপাসকদিগের ভর নত হইয়া পড়িয়াছে—জলের ভিতর অনেকটা ডুবিয়া গিয়াছে। উহাদের মধ্যে কেহ বা অঞ্জলিবদ্ধ হইয়া রহিয়াছে, কেহ বা জলের উপর পুষ্পনিক্ষেপ , aকরিতেছে। এই সমস্ত লোকের উদ্ধদেশে ধূসরবর্ণের সোপান, ধুসরবর্ণের সোপানভিত্তি ; এই সমস্ত গাথুনির গঠন ভারী-ধরণের ও রং পাকের মত। দেখিলে মনে হয়, যেন পবিত্র বারাণসীর মূলগুল পর্যন্ত বাহির হইয় পড়িয়াছে । . . .আবার আমীর নৌকা ধীরে ধীরে চলিতে লাগিল, অপেক্ষাকৃত নির্জন ঘাটের সন্মুখ
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/৬৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।