[ ৭ম বর্ষ, জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৪ ७२ বঙ্গদর্শন। —আজিকার মত ইহাই উহাদের শেষ ঝাপটাঝাপটি। মন্দির"াগুলা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আর দেখা যাইতেছে না ;-কালে-কালে বৃহৎ ঝাউগাছের আকার ধারণ করিয়া পাণ্ডুবর্ণ আকাশের অভিমুখে সমুথিত হইয়াছে। शूल, फूलबु भांगा ও তৃণাদির জঞ্জাল টানিয়া লইয়া আমার নৌকা আবার সেই চিতার নিকট ফিরিয়া আসিল । t একটা স্থল গন্ধ,—মৃত্যুর গন্ধ, বীভৎস গলিতদ্রব্যের গন্ধ ক্রমশ বাড়িতে লাগিল । "ঠিক যেখানটার চিতার বোরা উঠতেছে, তাহার নিকটে • উপনীত হইবার জন্য আবার আমাকে সেই ধ্যানমগ্ন লোকদিগের পাশ দিয়া —সেই অচলমূৰ্ত্তি ব্রাহ্মণদিগের ভাবে ভারাক্রান্ত অসংখ্য ডিঙীর পাশ দিয়া ফাইতে হইল। এই সমস্ত লোক, যাহারা বোগানন্দে আত্মহারা, যাহাঁদের মুখ “ভষ্মে আচ্ছন্ন, যাহাঁদের জলন্ত চক্ষু আমার চক্ষুর উপর নিপতিত—অথচ যাহারা আমাকে দেখিয়াও দেখিতেছে না— ইহাদের গা ঘেষিয়া আমার নৌকা চলিতেছে, তবু যেন আমার মনে হইতেছে—আমাদের মধ্যে কি-একটা অনির্দেশু দূরত্বের ব্যবধান রহিয়াছে । & শ্মশানের সেই কোণটিতে আমার পেছিতে একটু বেশী বিলম্ব হইয়াছে। একটা বৃহৎ চিতা—নিলোকের চিত দাউ দাউ করিয়া জলিতেছে—এবং তাহা হইতে লিঙ্গ ও শিখারাশি প্রবলবেগে . উৰ্দ্ধে * উঠতেছে। চিতার মাঝখানে সেই তরুণী, তাহার তার কিছুই দেখা যাইতেছে ন, শুধু দেখা যাইতেছে তাহার শোকম্লান একটি পা—একটিমাত্র পা ; যেন অতিমাত্র.যন্ত্রণা, ঐ পারে আঙুলগুলা পরস্পর হইতে অদ্ভুতভাবে ছাড়া-ছাড়া হইয় রহিয়াছে। চিত-আলোকের সম্মুখে , সেই পা-খানির কৃষ্ণবর্ণ ছায়াচিত্র অতীব পরিস্কটভাবে প্রকাশ পাইতেছে । - একটা ভাঙা-দেয়ালের উপরে ঘোমটাটানা, অদৃশুমুখশ্ৰী চারজন নুতন লোক উৰু হইয়া বসিয়া বেশ নিৰ্ব্বিকীরচিত্তে - উদাসীনভাবে বলিলেও হয়—এই তরুণীকে নিরীক্ষণ করিতেছে । উহার বোধ হয় তাহার আত্মীয়স্বজন, একই বংশের লোক-তরুণীর রূপলাবণ্যের অঙ্কুর বোধ হয় উহাদের হইতেই নিঃস্থত।... এই সব লোক-কাল আবার যাহাদের সহিত মিলিত হইবার জন্য আমার ইচ্ছা হইতেছে — ইহাদের যেরূপ বিশ্বাস, তাহাতে মৃত্যু, বিচ্ছেদ, পুনর্মিলন– এই সমস্তের ভাব কতটা বদলাইয়া যায়। এই যে তরুণীর আত্মা ইহলোক হইতে তপস্ট ত হইল, ইহার প্রকৃত আপনই sts প্রায় কিছুষ্ট ছিলন; তা ছাড়া,উহার আত্মীয়দের আত্মা হইতেও উৎপন্ন হয় নাই, কিন্তু হয় ত উহা একটি বহু পুরাতন তীয়া,যুগযুগাস্তব চইতে চৈতন্যলাভ করিয়াছে এবং যাত্রাপথে কিছুকালের জন্য উহাদের দুহিতা-রূপে ঐ তরুণদেহ আশ্রয় করিয়া ছিল, এইমাত্র । একটি আত্মা । প্রস্তান করিল ; কিছুকালের জন্য মুক্তিলাভ করল কিংবা চিরকালের জন্য মুক্তিলাভ করিল, তাহা কে বলিতে পারে ? আরো কিছুকাল পরে-ইহাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই আবার আসিয়া উহাদের সহিত মিলিত হইবেকিন্তু আরো কিছুকাল পবে, আরো কিছুকাল পরে, যুগযুগান্তের পরে। এরূপভাবে রূপান্তরিত হইবে, পরিবর্তিত হইবে যে, বহুকালের
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় সপ্তম খণ্ড.djvu/৬৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।