సి' বঙ্গবিজেতা। i সেই উদ্যান,—সে উদ্যানে সেই পুপচার, উপরে পূর্ণচন্দ্র,—সেই পুষ্পচারার মধ্যে সেই চন্দ্রালোকে সেই হৃদয়ের ইন্দ্রনাথ,—সহসা নয়নজলে সরলার মুখখানি প্লাবিত হইরা যাইত । আবার চক্ষু মুছিয়। কাৰ্য্য করিতে যসিত, আবার কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে চিন্তা আসিত । সন্ধ্যার সময় ছায়া যেমন ক্রমে ক্রমে অতি ধীরে ধীরে গগনমণ্ডল ও পৃথিবী আচ্ছন্ন করে,—প্রণয়চিন্তাও সেইরূপ ক্রমে ক্রমে অতি ধীরে ধীরে সরলার হৃদয় আচ্ছন্ন করিত + ভাবিত একবার যদি তাহার দেখা পাই,—এক মুহুর্তের জন্যও যদি তাহার দেখা পাই, তাহ হইলে তাহাকে বলি,—কি বলি ?—ন কিছু বলি না,—তাহ হইলে তাহার হৃদয়ে আমার জলন্ত হৃদয় স্থাপন করিয়া, তাহীর স্কন্ধে আমার মস্তক স্থাপন করিয়া, একবার মনের সাধে ক্ৰন্দন করিয়া স্বৰ্গসুখ লাভ করি । অভাগিণী একবার ক্ৰন্দন ভিন্ন তার কিছু চাহে না । *. আবার চিন্তা আসিত । একবার কি ইন্দ্রনাথের সহিত দেখা হইবে না ? অবশ্য হইবে ; কিন্তু সে কবে হুইবে ? এক্ষণেই দেথা হয় না কেন ? ইন্দ্রনাথ আদিতেছেন না কেন ? তিনি কি সরল কে ভুলিয়া গিয়াছেন ? সরলার চক্ষে আবার জল আসিল । ইন্দ্রনাথ কুশলে আছেন ত ? নয়নজলে মুখখানি প্লাবিত হইয়া যাইল । যালিক প্রেমের কথা কাহাকেও বলিত না, যে পাবকে হৃদয় দগ্ধ হইতেছিল সে পাবক কাহাকেও দেখাইত না, নীরবে অবারিত অশ্রুবারি দ্বারা সেই পাবক নিৰ্ব্বাণ করিতে চাহিত, ব্যধিবিদ্ধ কপোতীর ন্যায় নীরবে নিভৃত নিকুঞ্জ বনে যাতle সহ করিত। আর আশ্রমবাসীগণ—হায় ! তাহাদিগের মধ্যে কয়জন সরলার যাতনা বুঝিত ? ব্রাহ্মণগণ ক্রিয় কৰ্ম্মেই ব্যস্ত, সরলচিত্ত ব্রাহ্মণকন্যাগণ সরলার পীড়ার কিছুই বুঝিত না, সরলাকে কাতর দেখিলে দুঃখিত হইয়। জিজ্ঞাসা করিত, “ সরলা ! অদ্য তোমাকে এরূপ স্নান দেখিতেছি,—কোন অসুখ ত হয় নাই ? কোন কষ্ট হইয়াছে? কি মনে কোন দুঃখ কি ভাবন হইয়াছে ?" এরূপ প্রশ্নে সরল অধিকতর লজ্জিত হইত,—মে স্থান হইতে প্রস্থান করিত । এমন বিপত্তির সময় তাহার হৃদয়ের অমল কোথায় ? স্নেহগর্ভ বাক্যে হৃদয় শাস্ত করিবে, মিষ্ট হাস্য দ্বারা ভাবনা দূর করিবে, এমন অমল কোথায় ? আশ্রমের মধ্যে একজনমাত্র সরলার মনের ভাব বুঝিয়াছিল। কমল৷ সরলাকে কখন কখন আপনার সঙ্গে নিস্তব্ধ নদীকূলে, সুস্নিগ্ধ ছায়াবৃত বৃক্ষতলে লইয়। যাইতেন, সাস্বনা করিতেন, আপনার চিত্তার ভাগিনী
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১০০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।