বঙ্গবিজেতা । دمو কুটুম্ব কেহই ছিল না । বিধবাকে পিতা আশ্রয় দান করিয়া আপন নৌকায় তুলিলেন। তখনও আমার ঘোর পীড়া, গ্রামের সকলেই স্থির করিল যে নৌকাতেই আমার কাল হইবে। অনেক দিন জলপথে আসিতে লাগিলাম, নদীর স্বাস্থ্যজনক বায়ুতে আর পিতার যত্নে আমি পুনরায় আরোগ্যলাভ করিলাম, সংজ্ঞালাভ করিলাম ;–কিন্তু পুৰ্ব্বকথার স্মৃতি আর লাভ করিলাম না,—আমি কে, কাহার দুহিতা, কাহার স্ত্রী, কিছুই জানিতে পারিলাম না । সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ করিবার কিছুদিন পরেই নৌকা আসিয়া এই আশ্রমের ঘাটে লাগিল,—সেই অবধি আমি পিতার গৃহেই রহিয়াছি।” শুনিতে শুনিভে সরলার চক্ষে জল আসিল । সরলা ধীরে ধীরে কমলার নিকটে আসিয় তাহার হস্তধারণপূৰ্ব্বক বলিল,—“দিদি, আমি আর আপনার জন্য দুঃখ করিব না, তোমার এ সংসারে কিছু নাই, কেহই নাই, সেই জন্য আমার দুঃখ হইতেছে।” পরদুঃখে সরলার সরল হৃদয় দ্রবীভূত হইতেছিল । কমল উত্তর করিলেন, “ ভগিনি । আমার জন্য দুঃখ করিবার কোন কারণ নাই । স্মৃতি আমাদের দুঃখের কারণ ; যাহার স্মৃতি নাই তাহার দুঃখ কি ? আমার যদি পিতার কথা মনে থাকিত, স্বামীর কথা মনে থাকিত, তাহা হইলে কি আমি জীবনধারণ করিতে পারিতাম ? এখন আমি বালিকার মত সংসারচিত্তাশূন্য হইয়৷ এই বনে বিচরণ করি, নানারূপ অপার্থিব চিন্তায় সুখলাভ করি, প্রকৃতির অসীম সৌন্দৰ্য্য দৃষ্টি করিয়া চরিতার্থতা লাভ করি । প্রকৃতিই আমার পিতাস্বরূপ, প্রকৃতিই আমার স্বামী-স্থানীয় ; ইহা ভিন্ন অন্য স্বামী বা অন্য পিতা আমি জানি না।” দুই জনে অনেকক্ষণ এইরূপ কথোপকথন করিতে লাগিলেন। রাত্রি প্রায় দুই প্রহর হইতে চলিল, আকাশ ক্রমশ: মেঘাচ্ছন্ন হইতে লাগিল । চন্দ্র মেঘের ভিতর লুকাইলেন, মেঘরাশিও ক্রমে ক্রমে গভীর নীলবর্ণ ধারণ করিল। মধ্যে মধ্যে অল্প অল্প বিদ্যুৎ দেখা যাইতে লাগিল ও অল্প অল্প বায়ু বহিতে লাগিল । সরল কুটীরে যাইবার জন্য উৎসুক হইল, ” কিন্তু কমলা স্থিরনয়নে সেই নীল মেঘরাশির দিকে দেখিতে লাগিলেন, স্থিরচিত্তে সেই নিবিড় বনের ভিতর সেই বায়ুর শব্দ শুনিতে লাগিলেন । হৰ্ষোৎফুল্ললোচনে তিনি সরলাকে সেই বিদ্যুতালোক দেখাইতে লাগিলেন, ইচ্ছামতীর ফেনচুড় তরঙ্গমালা দেখাইতে লাগিলেন। সরল অগত্য। তাহাই দেখিতে লাগিল । à .
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১০৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।