বঙ্গবিজেতা ৷ * * * রাখাল বলিল, “দাদার মৃত্যু হওয়া অবধি একটু বাতাস হইলে মা আমাদিগকে বাহির হইতে দেন না । আজ তিনি কত ভাবিতেছেন।” দুই জনে কাদিতে লাগিল। কমল। তাহীদের সান্থনা করিয়া পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন,— “ তোমার দাদার কবে মৃত্যু হইয়াছে ?” রাখাল উত্তর করিল, “ আজি ছয় মাস হইল, এক দিন মাছ ধরিতে গিয়াছিলেন, ভয়ানক তুফানে নৌকা উণ্টিয় পড়িল, আর দাদাকে দেখিতে পাইলাম না। সেই অবধি পিতা পীড়ায় ও শোকে শয্যাগত, যতক্ষণ আমরা কিছু আনিতে ন পারি ততক্ষণ তাহার খাওয়া হয় না। তার মাতা ত সেই অবধি আজ পর্য্যন্ত দিনরাত্রি রোদন করিতেছেন।” কমলা আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “ তোমরা কিরূপে রোজগার কর ?” নবীন বলিল, “ কখন নাছ ধরি, কখন নদীর শেওলা জড় করিয়া যাহারা চিনি করে তাহাদিগের নিকট বিক্রয় করি, কখন বা র্যাত্রীদিগকে এস্থান ওস্থানে লইয়া যাইয়া কিছু কিছু পাই। যিনি আজ রুদ্রপুর হইতে এই আশ্রয়ে আসিলেন, তিনি আমাদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করেন, তাহার কোথাও যাইতে হইলে আমাদের ভিন্ন আর কাছাকেও ডাকেন না । আর কতদিন আমাদিগের খাইবার কিছু না থাকিলে আমরা উহার স্বামী নবীনদাসের নিকট যাইয়া দাড়াই, তিনি আমাদের চাল, ডাল, পয়সা না দিয়া বিদায় করেন না ।" য়াখাল বলিতে লাগিল, “কিন্তু তথাপ্লিও অীমাদের কখন কখন চলা ভার হয় ;–কতবার বৃষ্টি বাদলার দিন এমন হয় যে, আমাদের ঘরে খাবার নাই, আমরা ক্ষুধায় কাদি, মা আমাদের দেখিয়া কাদেন, পিতা রোগগ্ৰস্ত হইয়। পড়িয়া থাকেন, মুখে একখানি বাতাস দি, কি এক বিন্দু দুধ দি, এমন উপায় নাই। গ্রামে ধার চাহিলে ধার পাই না, গরিবকে কে ধার দিবে ? মা এক একবার বলেন, " য নবীনদাসের কাছে কিছু ভিক্ষা করিয়া আন,’— কিন্তু আবার ঘর হইতে বাহির না হইতে হইতে ফিরাইয়। আনেন ; বলেন, “এ বাতাসে কোথাও যেও নী, বাচিয় থাক, বাচিয়া থাকিলে অন্ন’ জুটিবে।" এইরূপ কথা কহিতে কহিতে দুইটী বালক কমলার সঙ্গে সঙ্গে চলিল । সে কথার শেষ নাই,—দুঃখীলোক যখন দুঃখের কথা বলিবার লোক পায়, তুখন কি তাহার কথার শেষ থাকে –হৃদয়ে দুঃথও যেরূপ অনন্ত, কথাও সেইরূপ অনন্ত। কিন্তু এ জগতে হতভাগাগণ দুঃখের কথা বলিয় একটু
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১১১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।