বঙ্গবিজেস্ত । *$$$ শন করিয়া রহিয়াছেন । চন্দ্রশেখরের কিঞ্চিৎ পশ্চাতে, ঈষৎ অন্ধকারে মহাশ্বেতা অবগুণ্ঠনবর্তী হইয়া বসিয়া রহিয়াছেন,– অন্ধকারে খাকিলেও বিধবার শুভ্র বসনে অৰ্বিত সে উন্নত কয় সকলেই দেখিতে পাইতেছিল, র্তাহার স্থির গম্ভীর ভাব দেখিয়া অবগুণ্ঠনসত্তেও আশ্রমবাসী সকলেই তাহাকে চিনিয়াছিল । তাহার পাশ্বে শিখণ্ডিবাহন বসিয়া রহিয়াছেন, মৃদু মৃদু কি কথা কহিতেছেন, এক একবার নগেন্দ্রনাথের দিকে লক্ষ্য করিতেছেন। চন্দ্রশেখরের বামহস্তের নিকট, অগ্নির সন্নিকটে কমলা বিনীতভাৰে বসিয়া রহিয়াছেন, অগ্নির দিকে স্থির লক্ষ্য করিয়া কি চিত্ত করিতেছেন । এক একবার তাছার পার্শ্ববৰ্ত্তী সেই দুইটী নিয়াশ্রয় বালকেয় প্রতি লক্ষ্য করিতেছেন, স্নেহসহকারে তাহাদিগকে অগ্নিনিকটে বসাইতেছেন,—তাহাদিগের সিক্ত বসন উত্তপ্ত করিতেছেন, এক একবার তাহাদিগের সংসারকথা, দুঃখকথা জিজ্ঞাসা করিতেছেন । কুটারের একপার্শ্বে অমলা ও সরলা বসিয়া রহিয়াছেন,—তাজ তাহাদিগের আনন্দ অপার, তাহাদিগের গল্প শেয হইতেছে না, তাহাদিগের সুমিষ্ট ওষ্ঠে সুহাসি শুকাইবার সময় পাইতেছে না । অপর একটী পাশ্বে নিস্তারিণী, মনোমোহিনী, যোগেন্দ্রমোহিনী ও তারাসুন্দরী ইত্যাদি অল্পবয়স্ক ব্রাহ্মণকন্যাগণ আমোদ ও রহস্য করিতেছে, তাহাদিগেরও কথার শেষ নাই, তামোদের শেষ নাই,--এক একবার মুখে বসন দিয়া হাসি সম্বরণ করিবার চেষ্টা পাইতেছে, আবার এক একবার নিস্তব্ধ হইয়া চন্দ্রশেখর ও নগেন্দ্রনাথের কথা শুনিতেছে । ইহা ভিন্ন অপরাপর ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণকন্যা অগ্নির চারিপার্শ্বে বসিয়া কথন কখন আপনাদিগের মধ্যে কথা কহিতেছে, কখন নগেন্দ্রনাথের কথা শুনিতেছে। নগেন্দ্রনাথ দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া চন্দ্রশেখরকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেম, “মহাত্মন! আমি আপনার বিস্তীর্ণ মহেশ্বর-মনির ও এই সুরম্য পুণ্যাশ্রম দেখিয়া অতিশয় প্রীত হইলাম। যদি আপনার মত মোহমর । ংিসার ত্যাগ করির এই ধৰ্ম্মপথ অবলম্বন করিতাম, তাহ হইলে এই বাৰ্দ্ধক্যে আমি অসীম দুঃখসাগরে ভাসিতাম না ।” চন্দ্ৰশেখয় উত্তর করিলেন,—“ মহাশয়, কেবলই কি আশ্রমে পুণ্যকৰ্ম্ম করা যায়, সংসারের মধ্যে থাকিয়া কি পুণ্যকৰ্ম্ম সম্ভবে না ? শাস্ত্রে বলে দান, ধর্থ ও পরোপকারিতায় যত পুণ্য, যাগযজ্ঞে তত নাই। যে জমাদার পরোপকারিত। ও প্রজাবৎসল্যের জন্য সৰ্ব্বত্রই সমাদৃত হয়েন, তাহার কি আশ্রমবাসের জন্য আক্ষেপ উচিত ?” *
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১১৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।