পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১৪ বঙ্গবিজেতা । স্কন্ধে মস্তকস্থাপন করিয়া উপবেশনা বস্থাতেই নিদ্র। যাইতেছিল, নিদ্রাতেও তাহার অধরে হাস্যকণা বিরাজমান রহিয়াছে। যেন প্রিয়দর্ঘীর স্পর্শমুখে নিদ্রাতেও আনন্দস্বপ্ন দেখিতেছে । অমলা অনন্যমনে জমীদারের কথা শুনিতেছিল, সুরেন্দ্রনাথ কে, তাহ জানিত না । মহাশ্বেতার শরীর ভয়ে কণ্টকিত হইয়াছিল । সুরেন্দ্রনাথ তাহারই কার্যোর জন্য যাইয়াছেন, সে কাৰ্য্যও বিপদরাশিবেষ্টিত । মহাশ্বে তা ভাবিলেন, “আমি অভাগিনী যদি সুরেন্দ্রনাথের মৃত্যুর কারণ হইয়া খাকি, তবে আপন শোণিত দিয়া ইহার প্রায়শ্চিত্ত করিব। ভগবানু ! রক্ষা কর ।” অনেকক্ষণ পরে চন্দ্রশেখর চক্ষুরুন্মীলিত করিয়া নগেন্দ্রনাথকে বলিলেন,— “ নিশ্চিত্ত হউন, আপনার সন্তান কুশলে আছেন।” নগেন্দ্রনাথের শরীরে যেন জীবন আসিল,—এ বিশাল বিপদ কীর্ণ সংসারে একমাত্র পুত্রবিয়োগের ন্যায় আর কি বিপদ আছে ? তথাপি বোধ হয় মহাশ্বেত্ত চন্দ্রশেখর অপেক্ষাও অধিকতর আরাম বোধ করিলেন,-পুণ্যাত্মার হৃদয়ে মহাপাতকের ভয়, পুলবিয়োগের ভর অপেক্ষাও গাঢ়তর ও ভীষণতর । এ আশঙ্কা হইতে নিশ্চিন্ত হইয়। নগেন্দ্রনাথ অন্যান্ত কথা কহিতে লাগিলেন । পুত্র কবে গৃহে আসিবেন. এক্ষণও আসিলেন না কেন, অনেকবারত ভ্ৰমণ করিতে বাহির হয়েন ; কিন্তু কখনও এতদিন বিলম্ব করেন নাই,-স্নেহবান পুত্র হইয়া পিতাকে ছাড়িয়া এতদিন কিরূপে আছেন, ইত্যাদি নানারূপ তালোচনা করিতে লাগিলেন । ক্ষণেক পর চন্দ্রশেখর জিজ্ঞাসা করিলেন— “ মহাশয়, আমি একটী কথা জিজ্ঞাসা করি,—এবার আপনার পুত্রের এতদিন বিলম্ব করিবার বিশেষ কারণ আপনি কিছু জানেন, যাইবার স্ময় আপনাকে বিশেষ করিয়া কিছু বলিয়াছিলেন ?” নগেন্দ্রনাথ ক্ষণেক নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন, পরে বলিলেন,— “ আপনার নিকট আর আমি পাপ কথা লুকাইব কেন ? আমার পুত্রের দোষ কিছুই নাই । বাছা যদিও পাগলের মত কখন কখন গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিত, তথাপি আমাকে ছাড়িয়া ক্রমান্বয়ে পাচ সাত দিন কখন থাকিতে পারিত না । এবার যে দুই মাস রহিমাছে, সে কেবল আমারই পাপে ।