冷效够 বঙ্গবিজেতা । সন্তান হইবে তাহাকে গঙ্গাসাগরে বিসর্জন দিব । তাহারই দুই এক বৎসর পরে দেবকন্যার ন্যায় রূপ-লাবণ্য-সম্পন্ন তামার একটী কন্যা হইল । সে কন্যার মুখাবলোকন করিয়া আমরা পুৰ্ব্বপ্রতিজ্ঞা ভুলিলাম, পিতামাতার সাধ্যে ছিল না যে, সেই সুন্দর পুন্তলীটকে বিসর্জন দের। "সে কন্যার মুখ আমি এক্ষণও বিস্তৃত হই নাই। চক্ষু দুইটী নিবিড় কৃষ্ণবর্ণ ও শাক্ত, চিত্ত ও নিরুপম শান্ত, প্রার ক্রন্দন করিত না । যদি কখনও ক্ৰন্দন করিত, তাহার মাতা তাহাকে গৃহের বাহিরে লইরা যাইয়া চন্দ্র দেখাইত বা কল্লোলিনী নদীর কলকলধ্বনি শুনাইত,--শিশু তাহাতেই একেবারে নিস্তব্ধ হইত। অল্প বরসে কি হৃদয় স্বভাবের সৌন্দর্ঘ্যে মুগ্ধ হইতে পারে ? “ মায়ায় প্রতিজ্ঞ ভুলিলাম, কিন্তু সে পাপের ফল ফলিল । তিন বৎসর বরঃক্রমের সমর আমার কন্যার সঙ্কটজনক পীড়া হইল, জীবনের আশা রহিল না । তখন আমরা পূৰ্ব্বপ্রতিজ্ঞ। স্মরণ করিলাম । দেবতার নিকট আবার মনিলাম; যদি কই৷ এই পীড়া হইতে আরোগ্য লাভ করে, তবে গঙ্গাসাগরে বিসর্জন দিব । সে পীড়। আরাম হইল, হৃদয় হইতে মায়। উৎপাটিত করিয়া আমরা কন্যাকে গঙ্গাসাগরে বিসজ্জন দিলাম । " বিসর্জন দিবার অগ্ৰে তাহার বক্ষঃস্থলে এক অপরূপ চিহ্ন দিলাম—- শিবের প্রতিম। অনপনেয় অঙ্কে অঙ্কিত করিয়া দিলাম, মানস ছিল, যদি বাছ সাগর হইতে পরিত্রাণ পার, যদি ত৷হকে কথন আবার দেখি, তবে আপন কন্য। বলিয়া চিনিব । বৎস পরিত্রাণ পাইয়াছিল,—এক দরিদ্র ব্রাহ্মণী তাহাকে জলরাশি হইতে তুলিয়া লইল,—কিন্তু সে কন্যাকে আর পাইলাম না । “গৃহে আসিয়া দেখিলাম, আমার সহধৰ্ম্মিণী কন্যাশোকে বিহবল হইয়াছেন,—সেই শোকে তাহার পীড়া হইল, সেই পীড়াতেই তাহার কাল হইল। তাহার শব শ্মশানে সৎকার করিতে লইয়। ধাইলাম। অগ্নি ধুধু করিয়া জলিতে লাগিল, আমি সংজ্ঞাশুন্য পাগলের ন্যায় সেইদিকে দেখিতে লাগিলাম। সে সময় আমার সম্পূর্ণ জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান থাকিলে আমি সে দুঃখভার বহন করিতে পরিতাম না,—জ্ঞান থাকিলে সেই অগ্নিরাশিতে মানবলীল। সম্বরণ করিতাম। অজ্ঞানের মত সেই চিতার দিকে চাহিয়া রহিলাম। অগ্নি জ্বলিয়৷ জলিয়। নিবিল,—আমার চারিদিকে ঘোর অন্ধকার হইল ।
- তখন মায়াজাল সহসা ছিন্ন হইল । যে কুহ এতদিন জীবন আচ্ছন্ন করিয়াছিল, সহসা তিরোহিত হইল। সংসারে আপনার বলিয়া সম্বোধন