3 \లిపి বঙ্গবিজেতা । দেবমূৰ্ত্তি দেখিতে পাইলাম। মা, আমি পাগলিনী, সহসা সেই মূৰ্ত্তিকে পিতা বলিয়৷ ডাকিলাম । মী, আমি অজ্ঞান,—কিম্বা স্বপ্ন দেখিতেছি।” মহাশ্বেতা আর শুনিতে পারিলেন না,— উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিয়া উঠিলেন,—অজ্ঞান বালিকার কথায় তাহার হৃদয় বিদীর্ণ হইতেছিল । শোকের প্রথম বেগ সম্বরণ হইলে মহাশ্বেত কন্যাকে পুনরায় আলিস্কন ও চুম্বন করিয়া বলিতে লাগিলেন, “ সরল, এ স্বপ্ন নহে, পুৰ্ব্বস্তৃতি তোমার হৃদয়ে জাগরিত হইতেছে, যে কথা আমি এতদিন লুকাইয়। রাখিয়াছিলাম, যে কথা তুমি এতদিনে ভুলিয়া গিয়াছ বোধ করিয়াছিলাম, সে কথা তাপন হইতেই তোমার অন্তরে উদস্থ হইতেছে, আর আমি তোমার নিকট কিছু লুকাইব না।” এই বলিয়া মহাশ্বেত আদ্যোপান্ত সমস্ত কখা সরলার নিকট বলিলেন । সরলার জন্মকথা, সমরসিংহের সম্মান ও গৌরবের কথা, তাহার অন্যার মৃত্যুর কথা, আপনাদিগের পলায়ন ও ছদ্মবেশের কথা ; এ সমস্ত কথা বালিকার সম্মুখে ভাঙ্গিয়া বলিলেন । সেই সকল কথা প্রথমে সরলার স্বপ্নের ন্যায় বোধ হইতে লাগিল, কিন্তু ক্রমে ক্রমে মোহজাল অস্তরিত হইতে লাগিল, ক্রমে ক্ৰমে দুই একটী কথা স্মরণ হইতে লাগিল। ঘর, দালান, স্তম্ভ দেখিতে দেখিতে পূৰ্ব্বকথা জাগরিত হইতে লাগিল । মহাশ্বেতার লোহহদয়ও অদ্য দ্রবীভূত হইতেছিল, মাত কন্যায় পরস্পর আলিঙ্গন করিয়৷ উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন । বিমল পার্শ্বে বসিয়া গভীর চিত্তায় মগ্র ছিলেন । র্তাহার ভ্রযুগল কুঞ্চিত, ওষ্ঠের উপর দত্ত স্থাপিত, নয়ন হইতে বিশ্ব লিম্ব বাহির হইতেছে। র্তাহার মনের ভাব পাঠক মহাশয় অনায়াসে অনুভব করিবেন। শকুনি যে কতদূর পামর, পিতাকে যে কতদূর পাপকৰ্ম্মে লিপ্ত করিয়াছে, fকজন্য মহাশ্বেতাকে বন্দী করিয়াছে ; এ সমস্ত চিত্ত। মহা-বাত্যার ন্যায় ঘোর গর্জনে তাহার হৃদয় আহত ও ব্যথিত করিতেছিল। বিমলা সহসা চিন্তাস্বপ্ন হইতে জাগরিত হইয় গম্ভীরস্বরে বলিতে লাগিলেন,—" মাতঃ, পামর শকুনির পাপ আমি এতদিনে জানিলাম,— এ বিশ্বসংসারে উছার মত পাতকী তার নাই, নরকেও উহার মত কীট নাই। কিন্তু উপরে ভগবান আছেন, এ ভীষণ পাপের ভীষণ প্রায়শ্চিত্ত আছে ” এই গম্ভীর কথা শুনিয়। মহাশ্বেত আপন চিন্তা ভুলিয়া গেলেন, বলিলেন,—“বংস বিমলা, ভগবানের উপর আমার অচলা ভক্তি আছে, কিন্তু
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।