\S* বঙ্গবিজেতা ৷ ছিল, তাহার সহিত এই বর্ণনা মিলিল,--কেননা বিমলা ও সরলা দুইজনেই ইন্দ্রনাথকে প্রেমচক্ষে অবলোকন করিয়াছিলেন,—দুই জনেরই হৃদয়ে একরূপ আকৃতি অঙ্কিত ছিল । বিমলার হৃৎকম্প হইতে লাগিল ; শরীরে ঘৰ্ম্ম হইতে লাগিল, নিশ্বাস প্রশ্বাস গাঢ় হইয়া আসিল । অবশেষে তিনি সরলাকে আর একটা কথা জিজ্ঞাসা করিলেন,— “ তাহার শরীরে কোন স্থানে কোন চিত্ন আছে ?”—নিম্পনা শরীরে নিৰ্ণিমেষ নয়নে বিমলা এই প্রশ্নের উত্তর প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। সরল বলিল, “ তাহার বামহস্তের পৃষ্ঠদেশে একটা নিবিড় কৃষ্ণ যৌতুক আছে ।” বিমল চীৎকার করিয়া শয্যায় বদন লুকাইলেন,—তিনি সে চিহ্ন মহেশ্বর-মন্দিরে বার বীর লক্ষ্য করিয়াছিলেন,—তাহার হৃদয় বিদীর্ণ হইতেश्लि । সরল বিমলার দিকে হস্ত প্রসারণ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “ কি হইয়াছে ?” “ না,’ বলিয়। বিমলা সরলার হস্ত সজোরে নিক্ষেপ করিল। সরল বিস্থিত হইয়া আবার হস্ত প্রসারণ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, * কোথাও ব্যথা পাইয়াছ ?” বিমলা পুনরায় হস্ত সরাইয়া দিয়া উত্তর করিল, “ না”—“হঁ। পাইয়াছি, হৃদয়ে”—“ না, পাই নাই ।” সরলা অধিকতর বিস্মিত হইয়। ক্ষণেক নিস্তব্ধ হইয়া রহিল । সেইক্ষণে বিমলার হৃদরে বজ্রের আঘাত হইতেছিল। ক্ষণেক পর সরল অতি কাতর করুণস্বরে বলিল,— “ বিমলা, আমার উপর রাগ করিয়াছ ? অামি কোন দোষ করিয়া থাকি ক্ষমা কর, আমি অতি অজ্ঞান, হতভাগিনী।” সে করুণস্বরে কাহার হৃদর দ্রবীভূত না হয় –বিমলার হৃদয়ও দ্রবীভূত হইল ; বলিলেন,— - “ না সরলা, তুমি আমার কোন দোষ কর নাই,-আমাকে ক্ষমা কর, আমার শিরঃপীড়া আছে। নিদ্র যাও, আমিও নিদ্রা যাই, তাহা হইলেই ব্যথ। আরাম হইবে ।” সরল আর কিছু জিজ্ঞাসা না করিয়া বিমলাকে স্নেহভরে আলিঙ্গন করিয়া আপনি ফিরিয়া শুইল । তাহার পূর্বুরাত্রির অনিদ্রাবশতঃ মুহূৰ্ত্ত, মধ্যেই নিদ্রায় অভিভূত হইল।
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৪২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।