বঙ্গবিজেড । సి gv) পারিতেন না । ভীষণ মেঘের অন্ধকারের মধ্যে বিদ্যুতালোক দেখা দেয়, মানবজাতির ঘোর দুঃখ-দুর্দিনেও মায়াবিনী অাশা দেখা দেয় ।--কেবল দুঃখচিত্তায় মগ্ন হইয়া থাকে, মনুষ্যের প্রকৃতি এরূপ নহে। বিমলার দুঃথ-মেঘের মধ্যে বিদ্যুতালোক কি ? বিমলার দুঃখ-দুদিনে একমাত্র আশা কি ?—ইন্দ্রনাথের প্রেমের চিন্তা,—রমণীর আর কি হইতে পারে ? সেই দুঃখ ও চিন্তীর্ণবে পতিত হইয়া বিমল প্রেমস্বরূপ একমাত্র ধ্রুব-নক্ষত্রে স্থিরদৃষ্টি রাখিয়া জীবনধারণ করিতেছিলেন,—দুঃখের মধ্যেও সুখ অনুভব করিতেছিলেন । বিমলা যদি সামান্ত বালিকার হায় চঞ্চলচিত্ত হইতেন, তাহ হইলে দুঃথের সময় বাটীতে যে কয়জন স্ত্রীলোক থাকিত, তাহাদিগের নিকট দুঃখকথা বলিয় তাহাদিগের সহিত কথোপকখন করিয়৷ নিজ দুঃখ বিস্মৃত হইতে পারিতেন । কিন্তু আমরা পূর্বেই বলিয়াছি, বিমল গম্ভীরচিত্ত, উন্নতচরিত্র, মানিনী স্ত্রীলোক ছিলেন,--আপনার স্থখ দুঃখ নীরবে অনুভব করিতেন ; আপনার পরামর্শ আপনিই করিতেন । এমন কি, সতীশচন্দ্রও কখন কখন আপন ধৰ্ম্মপরায়ণ মনির্ণী কন্যাকে ভয় করিতেন, কখন কখন তাহার নিকট পরামর্শ লইতেল । এরূপ স্থিরচরিত্রে কোন প্রবৃত্তি উত্তেজিত হইলে প্রস্তরে অঙ্কিত প্রতিমূৰ্ত্তির হার শীঘ্ৰ বিলীন হয় না । মহেশ্বর-মন্দিরে বিমলার হৃদয়ে যে প্রতিমূৰ্ত্তি অঙ্কিত হইয়াছিল, তাহার চিহ্ন অনপনেয় । এই সকল ও অন্তান্ত নানাবিধ কারণবশতঃ বিমলার হৃদয়ে যে প্রেমসঞ্চার হইয়াছিল, তাহা কালক্রমে অপনীত হইতে পারে নাই, বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়াছিল । মহেশ্বর-মন্দিরে যে বীর-মূৰ্ত্তি দেখিয়াছিলেন, সে বীর-মূৰ্ত্তি, সে দেব-মুক্তি সৰ্ব্বদাই তাহার নয়নের সম্মুখে জাগরুক ছিল, সৰ্ব্বদাই তাহার হৃদয়ে গভীরাঙ্কিত ছিল । সেই প্রেমের আশায় জলাঞ্জলি দেওরা কি দৃঢ়প্রতিজ্ঞতার কার্য্য, কি বীরত্বের কার্য্য, পাঠক মহাশয় এক্ষণে আলোচন করুন । রমণী-হৃদয়ে ইহার অধিক বীরত্ব সন্তবে না । আজি বিমলার পক্ষে ভীষণ দিন। কিন্তু বিমলা বিপদ হইতে পরিত্রাণ পাইবার উপায় উদ্ভাবন করিয়াছিলেন । প্রাতঃকালে বিমল শয্যাগৃহ হইতে অন্য একটা গৃহে যাইয়। উপাসনা করিতে লাগিলেন,—অনেকক্ষণ পৰ্য্যন্ত উপাসনা করিতে লাগিলেন,-অবিশ্রাত্ত আক্রধারা কপোলদেশ প্লাবিত করিয়া বহিতে লাগিল ।
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৪৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।