পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গবিজেতা । > 32 পর মহাশ্বেত ভীষণ ক্রোধপরবশ, হইলেও আপন জামাতার উপর প্রতিহিংসা লইয়। আপন একমাত্র বন্যাকে বিধবা করিতে সাহস করিবেন না । এইরূপ প্রস্তাব শুনিয়া মহাশ্বেতা ক্রোধে অন্ধ হইলেন, কিন্তু যাহার ক্ষমতা নাই, তাহার ক্রোধ করা বৃথা । সরল ভয়ে অস্থির হইল, কিন্তু শকুনি যে প্রতিজ্ঞ করে, তাহ অন্যথা করা কখনও কাহারও সাধ্য ছিল না। বিমলার পরামর্শানুসারে সরল কিছু দিনের অবসর চাহিল,—যে পূর্ণিমা তিথিতে ইন্দ্রনাথের সহিত পুনরায় মিলন হইবার ভরস ছিল, সেই দিন পর্য্যন্ত অবসর চাহিল । শকুনির তাঁহাতে কোন আপত্তি ছিল না, মনে মনে ভাবিলেন, যত বিলম্ব হউক না কেন, সিংহ-হস্ত হইতে মেষশাবকের উদ্ধারের উপায় সস্তাবনা নাই । সন্ধ্যাকাল সমাগত । বিমল গোপনে মহাশ্বেতা ও সরলার নিকট বিদায় লইয়া ছদ্মবেশে একখানি নৌকায় আরোহণ করিলেন, সে নৌক৷ মুঙ্গেরাভিমুখে যাইতেছিল। দুর্গের অতি গুপ্ত স্থান হইতে কতকগুলি কাগজাদি লইয়া যাইলেন, শকুনির জীবন মরণ তাহার উপর নির্ভর করিত। তীক্ষ্ণবুদ্ধিমতী বিমলা মুঙ্গেরনিবাসী পুরুষ বলিয় আপনার পরিচয় দিয়া পুরুষের বেশধারণ করিয়া অন্য যাত্রীদিগের সহিত যাইয়। মিশিলেন । আকাশ অন্ধকারময়, যত দূর দৃষ্ট হয়, সম্মুখে ও পশ্চাতে নদীর জল ধৃ ধূ করিতেছে, রাশি রাশি মেঘ সেই নীল জলে প্রতিফলিত হইতেছে, অল্প বায়ুতে নদীর জল উচ্চুসিভ হইতেছে, তরঙ্গমাল ও ফেনরাশির মধ্য দিয়া নেীক কল কল শব্দে চলিতেছে । উভয় পার্শ্বে কোথাও বা আম্রকানন নিশাচয়শ্রেণীয় ন্যায় নিবিড় অন্ধকারে দণ্ডায়মান রহিয়াছে ও বায়ুতে গম্ভীর শব্দ করিতেছে, কোথাও বা যতদূর শুভ্র বালুকারাশি বিস্তৃত রহিয়াছে, আকাশে দুই একটী নক্ষত্র দেখা যাইতেছে, মেঘ ক্রমাগত উড়িতেছে, কৃষ্ণবর্ণ মেঘের পর কৃষ্ণবর্ণ মেঘ পশ্চিমদিকে রাশীকৃত হইতেছে ;নৌকা কল কল শব্দে চলিতেছে । বিমলা নৌকার পশ্চাদ্ভাগে বসিয়া চতুৰ্ব্বেষ্টিত দুর্গের দিকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন । দেখিতে দেখিতে হৃদয়ে কত যে চিত্তার আবির্ভাব ? হইতে লাগিল, কে বলিবে ? ছয় বৎসর কাল যে দুর্গে অতিবাহিত করিয়াছেন, স্নেহময়ী মাতার যে দুর্গে মৃত্যু হইয়াছে, যথায় বাল্যকাল হইতে যৌবনকাল প্রাপ্ত হইয়াছেন, আজি সেই দুর্গ পরিত্যাগ করিয়া অনন্ত সংসার-সাগরে বাপ দিলেন । সে সাগরের কি কুল আছে, বিমলা কি সেই কুল পাইবেন, তাশ্রয়হীন। রমণী কি পিতাকে ফিরিয়া পাইবেন,—