বঙ্গৰিজেতা । نه٤ د যথার্থই বলিয়াছিলেন, পলায়ন কাহাকে বলে, তাহার সৈন্সের শিখে নাই । আজি রাজার জীবনরক্ষার ভার আমাদের হস্তে, সকলেরই এই কথা স্মরণ ছিল, সকলেই সম্মুখে দৃষ্টি করিতেছে, কেহই পশ্চাতে দেখিতে জানে না । ক্রমে ক্রমে রজনীর অন্ধকার সেই যুদ্ধক্ষেত্রকে আচ্ছন্ন করিল, যোদ্ধা ও প্রতিযোদ্ধাদিগকে আচ্ছন্ন করিল, হত ও তাহতদিগকে আচ্ছন্ন করিল, অশ্ব ও অশ্বারোহীকে আচ্ছন্ন করিল ; কিন্তু সে অপরূপ যুদ্ধ সাঙ্গ হইল না, সে তাশ্চৰ্য্য ব্যুহ ভঙ্গ হইল না । শত্রুগণ হতাশ হইয় একবার বেগে শেষ আক্রমণ করিল, ভীষণ গর্জন করিয়া একবার শেষ আক্রমণ করিল। দুই সহস্ৰ অশ্বারোহীর সে ভীষণ গর্জন চারিদিকে একক্রোশ পর্য্যন্ত শ্রুত হইল, আকাশের মেঘ পৰ্য্যস্ত কম্পিত হইল,—দুই সহস্র অশ্বের যুগপৎ পদবিক্ষেপে মেদিনী কম্পিত হইল, কিন্তু সে শব্দে ও সে পদবিক্ষেপে ইন্দ্রনাথের ব্যুহ কম্পিত হইল না। সে ভীষণ গর্জন ভীষণতর গর্জন দ্বারা প্রতিধ্বনিত করিল, সে আক্রমণকারী:দিগকে আবার তাহার দূরে নিক্ষেপ করিল। যুদ্ধ সাঙ্গ হইল না, সে অপরূপ ব্যুহ ভঙ্গ হইল না । অবশেষে সেতু নির্শিত হইল। রাজ পরিখা পার হইলেন, রাজ নিরাপদে আসিয়াছেন শুনিয়া ইন্দ্রনাথের সৈন্যগণ একেবারে সিংহ-গৰ্জ্জন করিল,—সে গর্জন এক ক্রোশ দূরে শক্র শিবির প্রবেশ করিল। তখনই তাহারা জানিল, যে জন্য দুই সহস্র সৈন্য পাঠান হইয়াছিল, তাহ বৃথা হইয়াছে। আক্রমণকারিগণ ভগ্নোদ্যম হইয়। নীরবে নিজ শিবিরাভিমুখে প্রস্থান করিল, যতক্ষণ রাজা টোডরমল্ল সেতু পার হইতেছিলেন, ইন্দ্রনাখ একদৃষ্টিতে তাহার দিকে দেখিতে লাগিলেন । যখন দেখিলেন, রাজা নিরাপদে দুর্গে প্রবেশ করিয়াছেন, ইন্দ্রনাথ সহসা আপন অশ্ব হইতে পতিত হইলেন। শত্রুর বর্শাতে র্তাহার বক্ষঃস্থল ভিন্ন হইয়াছিল, শোণিতে তাহার শরীর প্লাবিত হইয়াছিল । বলশূন্যতাবশতঃ মুচ্ছিত হইয়া ভূমিতে পতিত হইলেন । ইন্দ্রনাথের সৈন্যেরা অনেকেই সেতু পার হইয়াছিলেন। শক্ৰগণ যাইবার সময় দেখিল, ইন্দ্রনাথ তাহত হইয়াছেন । উল্লাসে চীৎকার করিয়া ইন্দ্রনাথকে ভূমি হইতে তুলিয়া লইয়। শিবিরাভিমুখে চলিল। ইন্দ্রনাথ বন্দী হইলেন।
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৬০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।