১৬৪ বঙ্গবিজেতা । শাস্ত । দিন গেল, সপ্তাহ অতীত হইল, মাস অতিবাহিত হইল, বিমলার আকৃতিতে কেহ কোন বৈলক্ষণ্য লক্ষ্য করিল না, কেবলমাত্ৰ বদনমণ্ডল দিনে দিনে ঈষৎ রক্তশূন্য হইল ও পাণ্ডুবৰ্ণ ধারণ করিল, কেবলমাত্র তাহার উজ্জল নয়ন দিনে দিনে এক অস্বাভাবিক উজ্জলত। ধারণ করিতে লাগিল, তাহা ভিন্ন দৈনিক কার্য্যে বিমলার দাসদাসীরাও কোন বৈলক্ষণা দেখিল না । বিমলার পিতা রাজা টোডরমল্ল কর্তৃক কোন বিশেষ কার্য্যে প্রেরিত হইয়াছিলেন, সুতরাং বিমলার মুখমণ্ডলে যে অল্প পরিবর্তন লক্ষিত হইল, দাসদাসীরা স্থির করিল, পিতার চিত্তাই তাহার কারণ । এরূপ সময়ে বিমলা একদিন সহসা শুনিলেন, ইন্দ্রনাথ আহত হইয়। শত্রুদিগের বন্দী হইয়াছেন । রমণীর হৃদয়ে অনেক সহ হয়, সকল সহ হয় না—বিমলার হৃদয়ে বজ্রাঘাত হইল। তথাপি সে মৰ্ম্মান্তিক ব্যথাও কাহাকে বলিলেন না, নীরবে সহ করিতে লাগিলেন, নীরবে রজনী দুই প্রহরের সময় সপ্তদশবর্ষীয় কামিনী একাকী অসহায় পিতৃগৃহ হইতে বহির্গত হইলেন, অসহায় সংসার-সাগরে বাপ দিলেন। পরদিন প্রাতে দাসদাসীগণ বিমলাকে আর দেখিভে পাইল না । বিমলা কোথায় ? হতভাগিনী কি আর জীবিত অাছে, পাগলিনী কি আত্মহত্য দ্বারা অসহনীয় দুঃখাগ্নি নিৰ্ব্বাণ করিয়াছে, উৎক্ষিপ্ত হৃদয়কে শান্তিদান করিয়াছে ?—ভীষণ চিত্ত –কিন্তু না করিবে কিজান্ত ? যাহার ইহকালে সুথ নাই, মুথের আশা নাই, যাহাকে ভগবান কেবলমাত্র । দুঃখভার বহন করিবার জন্ত জীবন দান করিয়াছেন, সে যদি সে জীবন বহন করিতে অস্বীকৃত হয়,—সে যদি সেরূপ জীবনকে উপলখণ্ডের হ্যায় অকিঞ্চিৎকর বোধ করিয়৷ সেই দুঃখভারের সহিত স্বেচ্ছাপূৰ্ব্বক কালের অতল সমুদ্রে নিক্ষেপ করে,—কে বলিবে সে পাপাত্মা বা অকৃতজ্ঞ,—কে বলিবে তাহার সে কার্য্যে দোষ স্পর্শে ? এদিকে শত্রর ইন্দ্রনাথকে অচেতন অবস্থায় বন্দী করিয়া শিবিরে লইয়া চলিল । অনেকক্ষণ পর পুনরায় ইন্দ্রনাথের চেতনা সঞ্চার হইল। তথন যাহা দেখিলেন, তাহাতে সামান্ত লোক হইলে ভয়ে হতজ্ঞান হইত। দেখিলেন র্তাহার চারিদিকে শক্রসমূহ আসীন রহিয়াছে। সম্মুথে এক উচ্চ সিংহাসনে মাসুমী কাবুলী উপবেশন করিরা রহিয়াছেন, তাহার ছুই পার্শ্বে মহামান্য পাঠান ওমরাহ ও অমাত্যগণ বলিয়া রহিয়াছে। ইন্দ্রনাথ তাহাদিগের মধ্যে টোডরমল্লের বিদ্রোহী সেনাপতি তখান ও হুমায়ুনকে দেখিতে পাইলেন। ইন্দ্রনাথের পশ্চাতে নিস্কোযিত আদিহন্তে একশত
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৬৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।