বঙ্গবিজেতা । ১৬ঞ্জ সেই, তৃণশয্যায় শয়ন করিয়া সেই বাতায়নের দিকে একদৃষ্টিতে দেখিতেছেন,—অন্ধকারস্থিত লতাপল্লব যেরূপ বাহুবিস্তার করিয়া আলোকের দিকে ধায়, বনীর নয়ন সেইরূপ বাতায়নের দিকে রহিয়াছে । বন্দী কি চিন্তা করিতেছেন ? রৌদ্ররেখায় পতঙ্গসমূহের খেলা দেখিয়া ও নিজ অবস্থা স্মরণ করিয়া কি খেদ করিতেছেন ? পতঙ্কগণ একদিনমাত্র কি একপ্রহর মাত্র জীবিত থাকে,—বন্দী কি সেই এক প্রহর যা এক দিনের নিশ্চিন্ত সুথের জীবন অভিলাষ করিতেছেন ? বাতায়নাগত পক্ষীগণ যখন পুনরায় পক্ষ বিস্তার করিয়া উড়িয়া যাইতেছে, বন্দীও কি তাহার সঙ্গে সঙ্গে মানসপক্ষ বিস্তার করিয়া সুন্দর জগৎসংসার ও অনন্ত নীল আকাশে পর্য্যটন করিতেছেন ? ইন্দ্রনাথ এ সকল চিত্ত| করিতেছেন না। র্তাহার হৃদয়কন্দরে ইহা অপেক্ষ দুঃখজনক চিন্তার উদ্রেক হইতেছে। র্তাহার আর জীবনের আশা নাই,—পাঠানেরা যদি সেই সময়েই র্তাহীকে হত। করিত, তাহাতে ক্ষতি ছিল না, কিন্তু নিষ্ঠুর পামরের তাহাকে কারাবাসে রাখিয়া চিত্তাগ্নিতে দগ্ধ করিতেছে । ইন্দ্রনাথ যোদ্ধা,—যোদ্ধার মৃত্যুতে ভয় নাই। কিন্তু তিনি মরিলে অন্যের কি ক্লেশ হইবে, সেই চিন্তায় তিনি অস্থির হইয়াছিলেন। তাহার পিতা পুণ্যাত্মা, নগেন্দ্রনাথ এই বাৰ্দ্ধক্যে একমাত্র পুত্রের মৃত্যুবাৰ্ত্ত শ্রবণ করিলে জীবন ত্যাগ করিবেন। নগেন্দ্রনাথের আর কেহই নাই, ভাৰ্য্যা নাই, কন্যা নাই, অন্য পুত্ৰ নাই, বৃদ্ধ একমাত্র পুত্রের উপর চাহিয়া জীবনধারণ করিতেছিলেন, সেই পুত্রের নিধনবাৰ্ত্ত শ্রবণ করিলে নগেন্দ্রনাথের গৃহ শুন্য হইবে, হৃদয় শূন্ত হইবে, বৃদ্ধ প্রাণত্যাগ করিবেন। পিতার কথা স্মরণ করিতে করিতে ইন্দ্রনাথের চক্ষুতে জল আসিল, যোদ্ধা চক্ষুর জল মোচন করিলেন। আর সেই অজ্ঞান বালিকা, সেই প্রেমবিহ্বল সরল, সেই সহায়হীনা, সম্পত্তিহীন, কুটারবাসিনী সরল, তাহারই বা কি দশ ঘটিবে ? সপ্তম পুর্ণিমার মধ্যে যাইযার প্রতিজ্ঞ করিয়াছিলেন,—সে সপ্তম পূর্ণিমা অতীত হইযে, বালিকা আশ নেত্ৰে চাহিয়। চাহিয়া চাহিয়া অবশেষে নয়ন মুদিত করিবে, জীবন অভাবে অপরিস্ফুট পুষ্পের ন্যায় নীরবে অসময়ে শুকাইবে। চিত্ত করিতে করিতে ইন্দ্রনাথের মস্তক ঘুরিতে লাগিল, নয়ন দৃষ্টিশূন্ত হইল,—বলিলেন, “ ভগবন ! তোমার স্বাহা ইচ্ছা হয় কর, বিধির নিৰ্ব্বন্ধে যাহ আছে হউক, আমি আর এ চিস্তাযাতন সহা করিতে পারি না।” -- পাঠানদিগের মধ্যে ইন্দ্রনাথকে পাড়ার সময় যত্ব করে এরূপ কেহই
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৬৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।