বঙ্গবিজেতঁt । برای نخ অপর পার্শ্বে অনন্ত বৃক্ষাবলী সেই অনন্ত বারিরাশির উপয় লম্বিত হইয়া রহিয়াছে । জগতে শব্দমাত্র নাই—কেবল মধ্যে মধ্যে বৃক্ষকোটর হইতে পেচক ভীষণ শব্দ করিতেছে, তার মধ্যে মধ্যে প্রহরীগণ ভীষণতর স্বরে শিবিয় রক্ষা করিতেছে —আর সমস্ত জগৎই সুষুণ্ড । ঘরের ভিতর তৃণশয্যায় বীরপুরুষ শয়ান রহিয়াছেন। আজি ইচ্ছাপুয় নগরস্থ তাহার বহুমুল্য পালঙ্ক কোথায় ? পিতার স্নেহ, সরলায় ভালবাসা, রাজা টোডরমল্লের বাৎসল্যভাব এ সমস্ত কোথায় ? বীরপুরুষ সেই তৃণশয্যায় শয়ন করিয়া নিদ্রিত রহিয়াছেন । জগৎ তাহার পক্ষে অন্ধকারময়, জীবন শোকপরিপূর্ণ, নিদ্ৰাই তাহার পক্ষে ক্ষণস্থায়ী আরাম। ইন্দ্রনাথের ললাট পরিষ্কার, ওষ্ঠে হাসির চিন্থ,—এ দুঃখসাগরে তিনি কি স্বপ্ন দেখিতেছেন ? দেখিতেছেন, যেন আজি সপ্তম পূর্ণিমা,–যেন অদ্য তিনি যুদ্ধে জয়লাভ করিয়া পুনরায় রুদ্রপুরে গিয়াছেন,-যেন বহুদিন পরে হৃদয়ের সরলাকে পাইয়া হৃদয়ে স্থান দিতেছেন,–যেন তাহার নয়নজলে সরলীর কৃষ্ণ কেশরাশি সিক্ত হইতেছে, যেন সূরলার আনন্দীশ্রীতে তাহার হৃদয় সিক্ত হইতেছে। নিদারুণ বিধি ! যে হতভাগার পক্ষে কিছুই নাই, জগতে সুখ নাই তাহাকে এমন স্বপ্ন হইতে কেন জাগরিত কর,~ এমন মুখের নিদ্র থাকিতে থাকিতে কেন সে অনন্ত নিদ্রায় অভিভূত হয় না ? সরলার অশ্রুজলে বেন ইন্দ্রনাথের হৃদয় অধিকতর সিক্ত হইতে লাগিল, ক্রমশঃ অধিক শীতল হইতে লাগিল ৷ শীত বোধ হওয়াতে ইন্দ্রনাথ জাগিয়া উঠিলেন, দেখিলেন, যথার্থই শ্রাবণ মাসের বারিধারার ন্যায় তাহার বক্ষঃস্থলে আশ্রীধারা পড়িতেছে—নিকটে দাসী বলির নীরবে দরবিগলিত আশ্রধারা বিসর্জন করিতেছে ! ইন্দ্রনাথ শিহরিয়া উঠিলেন। দাসীর মায়া ও দুঃখ দেখিয়া তাহার হৃদয় দ্রবীভূত হইল, আপনি অশ্র সম্বয়ণ করিতে পারিলেন না। বলিলেন, “দাসী! হতভাগার দুঃথে তুমি কি জন্য দুঃখিনী, আমার জন্য ক্ৰন্দন করিও না, আমার আয় জীবনের আশা নাই,-পরমেশ্বর তোমাকে সুখী করুন। তুমি আমায় দুঃখ বিস্মরণ হও —আমি আমার কারাবাসের একমাত্র বন্ধুকে জন্মান্তরেও বিস্মৃত হইব না।” দাসী উত্তর করিল না,—নীরবে ক্রনন করিতে লাগিল। ইন্দ্রনাথ আপন দুঃখবেগ সম্বরণ করিরা আবার বলিলেন,-“ দাসি ! আমি তোমাকে কিছু দিয়া পুরস্কার করি এরূপ আমার কিছুই নাই, যাহা
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৭২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।