১৭ e বঙ্গবিজেতা । ইন্দ্রনাথ উত্তর করিলেন,— -- “রমণী কোমল, প্রেমবিহবলা, ক্লেশসহনে অক্ষমা ! এগুলি রমণীর সৌন্দৰ্ঘ্য বৃদ্ধি করে, কিন্তু কোমলতা ও অসহিষ্ণুতা যোদ্ধার পক্ষে থাটে না,—যোদ্ধা এই জন্যই রমণীর বেশ ধারণ করিতে সঙ্কোচ করে ।” বিমলার বদনমণ্ডল আবার রক্তবর্ণ হইল,--বলিলেন, “ইন্দ্রনাথ ! আপনি রমণীজাতিকে জানেন না, রমণীজাতির সহিষ্ণুত কথনও আপনি দেখেন নাই । গত কয়েক মাস হইতে আপনার যশে মুঙ্গের পরিপূরিত হইয়াছে, আপনি বন্ধুবান্ধব ত্যাগ করিয়া, অtহার নিদ্রা ত্যাগ করিয়া কেবল যুদ্ধকার্য্যে যে সহিষ্ণুতা দেখাইতেছেন, সমস্ত বঙ্গদেশে তাহী রাষ্ট্র হইয়াছে ! কিন্তু আমি এই অন্ধকার নিশি সাক্ষী করিয়া বলিতেছি, এই মুঙ্গেরে একজন রমণী আছেন, যে আপনা অপেক্ষাও দুৰ্ব্বহণীয় ভার, ভীষণতর মতিন, আপন অপেক্ষ অপরূপ সহিষ্ণুতার সহিত নীরবে বহন করিয়াছে,—অহিতা কপোতীর হ্যায় নীরবে অপেন হৃদয়ের ক্ষত সহ করিয়াছে! ইন্দ্রনাথ ! ভগবান আপনাকে অনেক দিন নিরাপদে রাখুন, কিন্তু বিধির ইচ্ছা কেহই জানিতে পারে না।--কল্য যদি আপনি সিংহবিক্রম প্রকাশ করিয়া বিজরলক্ষ্মীর ক্রোড়ে সমরশায়ী হয়েন, আর আপনাকে উদ্ধার করিয়াছি বলিয়া নিষ্ঠুর পাঠানগণ যদি আমাকে অগ্নিতে দগ্ধ করিয়া হত্য করে, জানিবেন যে, আপনি যেরূপ ভয়শূন্য উল্লাস-পরিপূর্ণ হৃদয়ে যোদ্ধার মরণ স্বীকার করিবেন,—আপনার উদ্ধার সাধন করিয়া জীবনের সার্থকতা লাভ করিয়াছি, এই বিশ্বাসে এই অভাগিনী তদপেক্ষা উল্লাসের সহিত মরিতে সম্মত হইবে । সে অগ্নিরাশি দর্শনে মস্তকের একটা কেশও কম্পিত হইবে না, নয়নে একফিন্দু জলও লক্ষিত হইবে না ! যখন অগ্নিতে হৃদয় দগ্ধ হইবে, তখন পর্য্যস্ত ওষ্ঠে উল্লাস ও সহিষ্ণুতার হাস্য বিরাজমান থাকিবে,—পাঠানগণ রমণীর শরীর ভস্মীভূত করিতে পারে, কিন্তু রমণীর বীরত্ব জয় করিতে পারিবে না । ইন্দ্রনাথ, নারীজাতিকে সহিষ্ণুতায় অক্ষম বলিও না,—সহিষ্ণুতার জন্তই নারীজাতি জন্মগ্রহণ করে ।” এই কথা শুনিয়া ইন্দ্রনাথ স্তম্ভিত হইয়া রহিলেন,—অনিমেষলোচনে সেই বীরাঙ্গণার প্রতি দৃষ্টি করিতে লাগিলেন, সেই গম্ভীর আকৃতি, সেই উন্নত প্রশস্ত ললাট, সেই কুঞ্চিত ভ্ৰযুগলে সেই অমলবিক্ষেপী নয়নদ্বয়, সেই রক্তবর্ণ মুখমণ্ডল, সেই কম্পিত হৃদয় লক্ষ্য করিতে লাগিলেন । অনেকক্ষণ নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন,—অনেকক্ষণ পর বিমল! আবার অতি মৃদুস্বরে বলিতে লাগিলেন,—
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৭৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।