পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গবিজেতা । ১ ৭১

ইন্দ্রনাথ, ক্ষমা করুন, আমি প্রেমের পরিচয় দিতে আইসি নাই, আপন অহঙ্কারার্থও আইসি নাই, যাহা বলিলাম, বিস্মরণ হইবেন ।”

ইন্দ্রনাথ উত্তর করিলেন,—“ ভিখারিণি ! আজি যাহা দেখিলাম, জন্মান্তরেও বিস্কৃত হইব না,—স্ত্রীলোকের বীরত্ব নাই, একথা আর আমি কখনও বলিব না ;—কি করিতে হইবে বল, আমি তোমার বেশ ধরিতে সম্মত আছি—কিন্তু আমি গেলে কিরূপে তোমার উদ্ধার হইবে ?” বিমলা বলিলেন, “ আমার জন্য চিন্তা করিবেন না, আমার উদ্ধারের উপায় আছে,-উদ্ধার না হইলেও অধিক ক্ষতি নাই । ভিখারিণীর জন্য চিন্তা করিবে, ভিখারিণীর জন্য শোক করিবে, জগতে এরূপ কেহ নাই । অনন্ত সাগরের মধ্যে একটা জলবিম্ব যেরূপ লীন হইয়া যায়, তদ্রুপ এই জগৎসংসারে একজন হতভাগিনীর মৃত্যু অশ্রুত, অলক্ষিত ও অচিন্তিত থাকিবে । ভগবান্‌ আমার স্থানে জগতে যাহাঁকে পাঠাইবেন, তাহাকে যেন আম। অপেক্ষ সুখী করেন ।” 朗 ইন্দ্রনাথ বিমলার প্রতি তীব্র দৃষ্টি করিতে লাগিলেন। অবশেষে ধীরভাবে বলিলেন, "ভিখারিণি ! তুমি আমার উদ্ধারে যত্নবুল হইয়াছ, তাহার জন্য আমি আজন্মকাল তোমার নিকট বাধিত রছিলাম ; কিন্তু তোমাকে এই স্থানে রাখিয়৷ আমি কারাগার ত্যাগ করিব না,–উপরোধ করিও না ।” এবার বিমলা পরাস্ত হইলেন । অনেক অনুরোধ করিলেন, অনেক কারণ দর্শাইতে লাগিলেন,—কিছুতেই বীরপুরুষের প্রতিজ্ঞ বিচলিত করিতে পারিলেন না । ইন্দ্রনাথের একই উত্তর,--“ যিনি আমাকে একবার প্রাণদান করিয়াছেন, তাহাকে বিপদগ্ৰস্ত করিয়া আমি উদ্ধার প্রার্থনা করি না ;– এরূপ উদ্ধারে, এরূপ জীবনে আমার কায নাই।" বিমলা পরাস্ত হইলেন, বসিয়া অনেকক্ষণ চিন্তা করিতে লাগিলেন ; অবশেষে বলিলেন,

  • ইন্দ্রনাথ, আপনাকে দুঃখ দেওয়া আমার সঙ্কল্প নহে, কিন্তু আর উপায়ান্তর নাই,—আমি আর একটী কারণ নির্দেশ করিতেছি শ্রবণ করুন, আপনার উদ্ধার বাঞ্ছনীয় কি না, বিচার করুন ।”

ইন্দ্রনাথ শুনিতে লাগিলেন –বিমলা অনেকক্ষণ পর অতি কষ্টে বলিলেন,— “ আপনার প্রেমাকাঙ্ক্ষিণী সরলা আজি চতুৰ্ব্বেষ্টিত দুর্গে আবদ্ধ রহিয়াছেন। আগামী পূর্ণিমার পরপূর্ণিমার মধ্যে যদি আপনি তাহার উদ্ধার না করেন, তবে পামর শকুনি তাহাকে বিবাহ করিবে ।”