পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭২ বঙ্গবিজেতা । ইন্দ্রনাথ সহসা বজ্রাহতের ন্যায় চমকিয়া উঠিলেন । র্তাহার সমস্ত শরীর কম্পিত হইতে লাগিল,—ললাট হইতে স্বেদবিন্দু নির্গত হইতে লাগিল, নয়নে নিমেষ নাই, স্পন্দ নাই ! বিমলা তাহাকে অনেক আশ্বাস দিয়া সমস্ত বৃত্তান্ত বলিলেন । ইন্দ্রনাথ নীরবে শুনিলেন,—নীরবে হস্তের উপর ললাট ন্যস্ত করিয়া অধোবদনে রহিলেন । মস্তকে শির। স্ফীত হইতেছিল, নয়ন হইতে অগ্নিকণা বহির্গত হইতে লাগিল, হৃদয়ের ভিতর মুহূর্তে মুহূর্তে যেন বজ্রাঘাত হইতে লাগিল । অনেকক্ষণ পর ইন্দ্রনাথ ধীরে ধীরে মস্তকোত্তোলন করিয়া বলিলেন,— “ ভিখারিণি ! তোমার কথাই থাকিবে, আমি পলায়ন করিব,-কিন্তু একটা প্রতিজ্ঞ কর।” বিমলা জিজ্ঞাসা করিলেন, “ কি প্রতিজ্ঞ ?” ইন্দ্রনাথ বলিতে লাগিলেন, “ যদি কল্য উদ্ধারের অন্য উপায় ন৷ দেথ,—যদি নৃশংস পাঠানেরা তোমার বধের আজ্ঞা দেয়, অঙ্গীকার কর মাসুমীর নিকট এক দিবসের সময় প্রার্থনা করিও । আমি মাসুমীকে বিলক্ষণ জানি,—অবলার এ যাজ্ঞায় কখনই অস্বীকৃত হইবেন না—এক দিনের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটিতে পারে।” বিমলা প্রতিশ্রুত হইলেন। তথন বিমলা ইন্দ্রনাথকে স্ত্রীবেশে সজ্জিত করিয়া দিলেন। ইন্দ্রনাথ আপনার নূতন রূপ দেখিয়া হাসিলেন। আবার বিমলার দিকে চাহিলেন,—সে হাসি শুকাইয়া গেল । অশ্রুপুর্ণলোচনে বিমলার হস্ত দুইটী আপনার দুই হস্তে ধারণ করিয়া বলিলেন,— "ভিখারিণি । দুইবার তুমি আমার প্রাণরক্ষা করিলে, আমি চিরকাল তোমার নিকট ঋণী রহিলাম।" নয়নের অশ্রু বেগে বহিতে লাগিল, বিমলার হস্ত সিক্ত হইল, ইন্দ্রনাথ বেগে বহির্গত হইলেন । বিমল তখন বাকুশূন্য হইয়া রহিলেন, তাহার হৃদয়ে বিদ্যুৎ ছুটিতেছিল, অপার্থিব সুথে তাহার হৃদয় বিচলিত হইতেছিল ! ইন্দ্রনাথের মধুর বাক্যে র্তাহার কৰ্ণ পরিতৃপ্ত হইতেছিল, ইন্দ্রনাথের প্রতিস্থচক নয়নজলে র্তাহার হস্ত সিক্ত হইতেছিল,-বিমলা স্ত্রীলোক,—মুহূর্তের জন্য একবার বীরপ্রতিজ্ঞ ভুলিলেন,—মুহূর্তের জন্য ইন্দ্রনাথকে লইয়া মুখী হইবেন, এইরূপ আশ। জাগরিত হইল ভূত, ভবিষ্যৎ, বৰ্ত্তমান ভুলিলেন,—মুহুর্ভের জন্য সেই প্রেমময় বীয়পুরুষকে মনে মনে আপন স্বামী বলিয়া সম্বোধন করিলেন । অভাগিনি ! তোমার স্বামি কে ? বিমলা সহসা সুখস্বপ্ন হইতে জাগরিত