s१७ বঙ্গবিজেতা । ইন্দ্রনাথের অশ্বারোহী ও তৎপরে পদাতিক সৈন্ত পরিখা পার হইল বটে, কিন্তু সম্মুখে সহস্ৰ সহস্ৰ পাঠান সৈন্য সজ্জিত রহিয়াছিল ; ইন্দ্রনাথ সসৈন্যে বিনাশ ভিন্ন অন্য উপায় দেখিলেন না । অচিরাং ভীষণ যুদ্ধ আরম্ভ হইল। কাহার সাধ্য সে ভীষণ যুদ্ধ বর্ণনা করে ? চারিদিকে ঘোর অন্ধকার, আকাশে ভীষণ মেঘরাশি বায়ুতে ধাবিত হইতেছে, ইন্দ্রনাথের চতুর্দিকে ভীবণতর সৈন্যমেঘ প্রধাবিত হইতেছে। সেনা ভয় কাহাকে বলে জানে না, ইন্দ্রনাথ যতক্ষণ আছেন, অবশু জয় হইবে। সেই সেনাগণের বীরত্ব কে বর্ণনা করিবে । চক্ষুতে নিমেষ নাই, অস্ত্রসঞ্চালনে বিশ্রাম নাই, সহস্ৰ সহস্র সৈনিক চারিদিকে আঘাত করিতেছে, অনায়াসে প্রতিহত হইয়া দূরে নিক্ষিপ্ত হইতেছে,-ভীযণ বায়ুপ্রপীড়িত সমুদ্রের মধ্যে পৰ্ব্বতশেখরবৎ ভীষণ বাত্যার মধ্যে লৌহ স্তম্ভবৎ তাহারা অচল অটল হইয়া দণ্ডারমান হইয়া রহিয়াছেন । একজন, দুই জন, দশ জন হত হইলেন,— ক্ষতি নাই,—চারিদিকে লেনাতরঙ্গ ভীম কলরবে “আল্লা হু আকবর ” শব্দ করিয়া মুহূৰ্ত্তে মুহূৰ্ত্তে বার বার আক্রমণ করিতেছে,-ক্ষতি নাই, শত্রুসৈন্ত ক্রমশঃই বৃদ্ধি পাইতেছে, বর্ষার মেঘের মত জড় হইতেছে, বর্ষার বজ্রের মত গর্জন করিতেছে,—ক্ষতি নাই, নিঃশব্দে নিঃশঙ্কে বঙ্গীয় যোদ্ধা যুদ্ধ করিতেছেন । ধন্ত যুদ্ধ-কৌশল ! ধন্ত বীরত্ব ! অপার্থিব রাক্ষসের মত বলিষ্ঠ ও ভীষণ শত্রুগণ অপার্থিব সাহস ও তেজে আক্রমণ করিতেছে,-ক্ষতি নাই । অস্থর তুল্য পাঠানের তরঙ্গে তরঙ্গে আসিয়া আঘাত করিতেছে, দেবতুল্য অশ্বারোহীগণ নিঃশব্দে তাহাদিগকে প্রতিহত করিতেছেন, শীঘ্রই সেই রণস্তম্ভের চতুর্দিকে মৃতদেহের প্রাচীর হইয়া উঠিল, কিন্তু রণস্তম্ভ ভগ্ন হইল না । ধন্য বীরত্ব ! সহসা সহস্ৰ বজ্রের অধিক শব্দ হইয়া উঠিল । পাঠানদিগের শিবিরে যে অগ্নি দেওয়া হইয়াছিল, তাহা কোনরূপে যাইয়া বারুদে পড়িয়াছিল, একেবারে কত শত মণ বারুদ জলিয়া উঠিয়াছিল। যে বৃহৎ অট্টালিকায় বারুদ ছিল, তাহ চুৰ্ণ হইয়া আকাশে উঠিল, মেদিনী কম্পিত হইতে লাগিল, আকাশ ও পৃথিবী আলোকে ঝলসাইয়া যাইল। সে তেজ ও সে ভীষণ রবের সম্মুখে মনুষ্যের তেজ স্তব্ধ হইল, সহয় যুদ্ধ থামিয়া যাইল, সকলেই সেই দিকে একদৃষ্টিতে চাহিল। ইন্দ্রনাথ এই অবসরে কেবল পঞ্চজন মাত্র, অতি বিশ্বাসী অশ্বারোহী সঙ্গে লইয়া সহসা বিদ্যুতের ন্যায় তেজে একদিক্ৰ ভেদ করিয়া চলিয়। যাইলেন । পাঠানের তাহার গতিরোধ
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৮০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।