পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গবিজেতা । سرانه লৌহমণ্ডিত হস্ত দ্বারা আপন ললাটে আঘাত করিলেন, ঝনৃঝনা করিয়া শব হইল, ললাট হইতে রুধিরধারা নির্গত হইতে লাগিল । আবার ডাকিলেন, “ভিখারিণি !” “ ভিখারিণি !” “ ভিখারিণি " কোন উত্তর নাই, এক পাশ্বে দেখিলেন, অগ্নিরাশি নিৰ্ব্বাণপ্রায় হইয়। রহিয়াছে। নৃশংস পাঠান ভিখারিণীকে কি দাহ করিয়াছে ? ইন্দ্রনাথের স্থাৎকম্প হইল, ভূমিতে পতিত হইলেন। আকাশের দিকে চাহিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন,—সহস নিকটস্থ তরুকোটর হইতে যেন সেই দীর্ঘনিশ্বাস প্রতিধ্বনিত হইল । ইন্দ্রনাথ লম্ফ দিয়া উঠিলেন, সেই বৃক্ষের অন্তরালে যাইয়া দেখিলেন, কোথাও কিছু নাই, কেবলমাত্র রজনী-বায়ু এক একবার ভীষণ উচ্ছ্বাসে বহিতেছে, কেবলমাত্র দূর হইতে ভীষণ যুদ্ধ-শব্দ কর্ণকুহরে প্রবেশ করিতেছে, চারিদিকের নিবিড় অন্ধকারের মধ্যে এক একবার ভীষণ অগ্নিশিখ। দেখা যাইতেছে—ইন্দ্রনাথ হতাশ হইয়। আবার ভূমিতে পতিত হইলেন, সহস্ৰ শক্ৰকর্তৃক পরিবৃত হইয়া সেইস্থানে প্রাণ বিসর্জন করিবার প্রতিজ্ঞ করিলেন,—ভিখারিণীর’দশ চিন্তা করিয়া আবার দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ করিলেন । আবার সে নিশ্বাস যেন প্রতিধ্বনিত হইল । ইন্দ্রনাথ বিস্মিত হইলেন, আবার চারিদিক দেখিতে লাগিলেন, সহসা অন্ধকারে এক মানবাকৃতি দেখিতে পাইলেন,—হরি হরি একি ভিখারিণী ! ভিখারিণীকে যে অবস্থায় দেখিলেন, তাহাতে পাষাণ-হৃদয় বিগলিত হয়। বিমলা দণ্ডায়মান রহিয়াছেন, কিন্তু সেই বৃক্ষে আপাদমস্তক বদ্ধ রহিয়াছে । হস্তস্বয় পশ্চাদিকে বৃক্ষের সহিত বদ্ধ রহিয়াছে, পদদ্বয় বৃক্ষের সহিত বদ্ধ রহিয়াছে, কক্ষ ও বক্ষঃস্থল রজুদ্বারা এরূপ সজোরে বদ্ধ রহিয়াছে, যে সেই সেই স্থান হইতে শোণিত নির্গত হইতেছে, কেশপাশ কতক পশ্চাতে বৃক্ষের সহিত বদ্ধ রহিয়াছে, কতক শরীরের উপর লম্বিত রহিয়াছে । মুখের উপর এক খণ্ড বস্ত্র রদ্ধ রহিয়াছে, কথা কহিবার উপায় নাই । কটদেশে কেবল একখানি জীর্ণবস্ত্র ছিল, তদ্ভিন্ন মস্তক হইতে পদ পৰ্য্যন্ত সম্পূর্ণ শরীর উলঙ্গ, কেবল নিবিড় কেশরাশি জামু পৰ্য্যন্ত লুটাইয়। পড়িয়া শরীর আবৃত করিতেছে। বিমলা স্বর্গের দিকে একদৃষ্টিতে চাহিয়। রহিয়াছিলেন, বাহ্যিক বস্তুতে র্তাহার মন নাই, বিমলা পরমেশ্বরের পবিত্র নাম জপ করিতেছিলেন, তাহার ক্লেশ নষ্ট, খেদ নাই, ভয় নাই, লজ্জা নাই, ঠাহীর বদনমণ্ডলে কেবল পবিত্র শান্তি বিরাজ করিতেছিল।