ৰঙ্গৰিজেক্ত । సు জীবনে আর তাহার আশা ভরসা নাই। আজি সপ্তম পূর্ণিমা, ইন্দ্রনাথ অদ্যও আসিলেন না, সরলার জীবনের তাশা অদ্য ফুরাইল । একবার বাল্যাবস্থার কথা মনে আসিল । মহামান্য সমরসিংহের একমাত্র দুহিত। এই প্রশস্ত দুর্গে এই বিস্তীর্ণ উদ্যানে বেড়াইত, পিতার ক্ৰোড়ে উঠিয়া শাখা হইতে ফুল পাড়িত, মাজার ক্রোড়ে উঠিয়া এক দিন একটা পাখী ধরিবার চেষ্টা করিয়াছিল। পাখী উড়িয়া গেল, নিৰ্ব্বোধ শিশু কঁাদিল, নিৰ্ব্বেধ শিশু জনিত না যে, জীবনের আশা ভরসা সকলই সেই পাখীর মত একে একে উড়িয়া বাইবে । তাহার পর ছয় বৎসর কাল রুদ্রপুরে অতিবাহিত হইয়ছে। দরিদ্র পল্লীগ্রামে দরিদ্র কুটীরে সেই ছয় বৎসর কাটিয়াছে—কিন্তু ধন হইলেই মুখ হর না, দরিদ্রত হইলেই দুঃখ হয় মা । সরলার অন্তঃকরণে সেই ছয় বৎসর পরম মুখের কাল বলিয়। বোধ হইল। প্রাণের সখী অমলা । তাহাকে কি আর দেখিতে পাইবে ! প্রাতঃকালে সেই অমলার সহিত প্রত্যহ ঘাটে জল আনিতে যাইত, সন্ধ্যার সময় সেই অমলার সহিত অনন্ত উপকথা, অনন্ত প্রণয়ের কথা হইত। মুখের সময় সেই অমল নিকটে থাকিলে মুখ দ্বিগুণ হুইত, দুঃখের সময় অমলার প্রবোধবাক্যে দুঃখ শান্তি হইত। আজি সে অমল কোথায় ? পার্থীর মত উড়িয়া গিয়াছে ! আর সেই ইন্দ্রনাথ ! যাহার চিত্তায় আজি ছয় মাস সরলার হৃদয় বিদীর্ণ হইতেছে, যাহার তাশায় তাজি ছয় মাস সরল জীবনধারণ করিয়া রহিয়াছে, সে হৃদয়ের ইন্দ্রনাথ কোথায় ? বাল্যকালে ইচ্ছামতীতীরে যাহার ক্রোড়ে বসিয়া বালিক গল্প শুনিল, গল্প শুনিত হার একদৃষ্টে সেই মুখের দিকে চাহিয়া থাকিত ; যৌবনের প্রারম্ভে যে প্রেমময় মুখখানির কথা সদাই ভাবিত, ভাবিত আবার রহিয়া রহিয়া সেই মুখখানি দেথিয় হৃদয় শীতল করিত, সে ইন্দ্রনাথ কোথায় ? রুদ্রপুরের কুটীর পাশ্বে চন্দ্রীলোকে যে ইন্দ্রনাথ বিদায় লইয়াছিলেন, সেই অবধি যে ইন্দ্রনাথের চিত্ত দিবারাত্রি সরলার হৃদয়ে জাগরিত রহিয়াছে, সে ইন্দ্রনাথ কোথায় ? হায়! তিনিও পক্ষ বিস্তার করিয়া উড়িয়া গিয়াছিলেন, অনন্ত সংসারাকাশে বিচরণ করিতেছেন ! সরল ভাবিয়া ভাবিয়া হতজ্ঞান হইল। মাথা ঘুরিতে লাগিল, কিন্তু চক্ষুতে জল নাই । বালিকার হৃদয়ে আজি যে যাতনা কে জানিবে ? যতদিন জীবনে একটা আশা থাকে, ততদিন জীবন সহনীয় হয়, কিন্তু সরলার পক্ষে এক একটা করিয়া সকল আশাই তিরোহিত হইয়াছিল। পৃথিবী
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/১৯৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।