পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গবিজেতা । بeb چ বলিয়া ডাকিতে লাগিলেন, সভাসদগণ যেন সাক্ষাৎ সেই জগৎ-বিমোহিনী বিশ্বেশ্বরী জগৎ-মাতা দুর্গাকে দেখিতে লাগিলেন । কবির কবিতা যখন সাঙ্গ হইল, শ্রোতাগণের কর্ণে সেই সুমধুর কবিতা তখনও প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল । রাজা টোডরমল্লের হিন্দুধৰ্ম্মে গাঢ় ভক্তি ছিল । এই ধৰ্ম্মসঙ্গীত শুনিয়া তাহার হৃদয়ে যে কিপর্যন্ত ভক্তিরসের আবির্ভাব হইয়াছিল, তাহ বর্ণনা করা যায় না । কবিতা সাঙ্গ হইলে ক্ষণেক নীরব হইয়া রহিলেন, ক্ষণেক পরে বলিলেন, “ আপনার জন্ম সার্থক, চণ্ডী যথার্থই আপনার হৃদয়ে অধিষ্ঠান করিতেছেন, আমরা কেবল বৃথা মায়াজালে জড়িত হইয়া রহিয়াছি, রাজ্যশাসন ত্যাগ করিয়া আপনার মত ভিক্ষা করত জীবন ধারণ করিয়াও ঐ অপরূপ কবিতা শিখিতে ইচ্ছা হয়। আপনার নাম কি, নিবাস কোথায় ?” এই বলিয়া গলদেশ হইতে সুবর্ণ হার উন্মোচন করিয়া কবিকে প্রদান করিলেন । কবি উত্তর কপিলেন, “ মহারাজ, বৰ্দ্ধমান জেলায় দামুন্য গ্রাম আমার নিবাস, আমার পিতামহের নাম জগন্নাথ মিশ্র, পিতার নাম হৃদয় মিশ্র, আমার নাম মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। এক্ষণে বাঁকুড়ার জমীদারের অধীনে আছি, তিনিই আমাকে প্রতিপালন করিতেছেন,—আমি তাহার পুত্রকে শিক্ষা দান করি ।” রাজা বলিলেন, “আমি তোমার কবিতায় সস্তুষ্ট হইয়াছি, তোমার চণ্ডীর প্রতি যেরূপ প্রগাঢ় ভক্তি দেখিতেছি, একখানি ‘চণ্ডীকাব্য ’ রচনা কর, তোমার নাম চিরস্মরণীয় হইযে ” এই বলিয়। দ্বিতীয় কবিকে পাঠ করিতে আদেশ করিলেন । সকলেই ইঙ্গিত করিয়া বৃদ্ধ কবিকে কবিতা পাঠকরিতে নিষেধ কয়িলেন। বলিতে লাগিলেন, “ মুকুন্দরামকে রাজা যেরূপ প্রশংসা করিলেন, আর তোমার কবিতা পাঠ করা বৃথা, কি জন্য অপদস্থ হইবে,--আগ্ৰেই পরাজয় স্বীকার কর, মানে মানে গৃহে প্রত্যাগমন কর।” কিন্তু কবি কাহারও কথা শ্রবণ না করিয়া কবিতা পাঠ করিতে লাগিলেন। রামচন্দ্রের শোকে রাজা দশরথের মৃত্যু বর্ণনা করিতে লাগিলেন। পাঠারম্ভ করিবার পূৰ্ব্বে সকলেই স্থির করিয়াছিলেন, মুকুন্দরাম জয় লাভ করিবেন, কিন্তু যখন সেই প্রাচীন কবি গম্ভীরস্বরে, অশ্রুপরিপূর্ণলোচনে সেই দুঃখবাৰ্ত্ত গাইতে আরম্ভ করিলেন, সকলেই একেবাবে চমকিত হইলেন। ভাষাসাগর মন্থন করিয়া মুচিকণ বাক্যরত্ব সমুদায় মিৰ্ব্বাচন করত যখন