ఫిy বঙ্গবিজেতা। o করিতেন, প্রজাদিগের দারিদ্র্যে সন্তোষ, জ্ঞানশূন্যতায় দোষশূন্তত, দুঃখ ও ক্লেশে তপস্বীর ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করিতেন, দিনে দিনে বৎসর বৎসরে যুগ যুগান্তরেও প্রজাদিগের অপরিবর্তিত অবস্থা আলোচনা করিতেন । কতবার প্রজাদিগের সামান্ত বিষয়ের কথাবার্তা শুনিতেন,— অমুক গ্রামে একটা পুষ্করিণী থনন হইতেছে ;-অমুক গ্রামে ধান্য দুমুল্য হইতেছে—এস্থানের মহাজন বড় শিষ্ট লোক ;–ওস্থানের গোমস্ত বড় অত্যাচারী ; সুরেন্দ্রনাথ এই সকল কথাই আগ্রহপূর্বক শ্রবণ করিতেন । এরূপ সময়ে তিনি আপন ধনমৰ্য্যাদা বিস্তৃত্ব হইতেন ; তাপন কুলগৌরব বিস্কৃত হইতেন ;–সেই ধানক্ষেত্ৰবেষ্টিত, আম্রকাননশোভিত কুটীরাবলিনিবাসিদিগকে আপন ভ্রান্ত জ্ঞান করিয়া ভ্রাতার মত তাহাদিগের সাহায্যে তৎপর হইতেন । এরূপ লোককে সকলেই পাগল বলিবে না ত কি ? যখন মহাশ্বেত বালিকা কন্যা লইয়। চতুৰ্ব্বেষ্টিত দুর্গ হইতে পলায়ন করেন, সুরেন্দ্রনাথ আপন পিত্ৰালয় ত্যাগ করিয়া অনেক দিন অন্বেষণের পর তাহার সন্ধান পাইলেন । তৎকালে মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী-তীরে মহন্ত চন্দ্রশেথরের নিকট মহেশ্বর-মন্দিরে আশ্রয় লইয়াছিলেন । সুরেন্দ্রনাথ তথায় যাইয় তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিলেন, এবং তাহাকে তাশ্রয় দানের ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন । কিন্তু অভিমানিনী মহাশ্বেত দরিদ্রাবস্থায়ও গৰ্ব্বিতা ছিলেন, সহায়ত গ্রহণ করিতে সম্মত হইলেন না । সুরেন্দ্রনাথ বার বার উপরোধ করিলেন, কিন্তু মহাশ্বেত বার বার অসম্মতি প্রকাশ করিয়া বলিলেন, “ রাজ সমরসিংহের বংশ এই দরিদ্রাবস্থায়ও মাননীয়,— পরের নিকট ভিক্ষা গ্রহণ করে না ।” এ কথায় সুরেন্দ্রনাথ অগত্য উপরোধ হইতে নিরস্ত হইলেন । অবশেষে বলিলেন, “ আপনার স্বামীর নিকট আমরা অনেক উপকার প্রাপ্ত হইয়াছি, অনেক বিষয়ে ঋণগ্রস্ত আছি, এই অসময়ে যদি কোন প্রত্যুপকার না করিতে পারিলাম, তবে চিরকাল আমার জন্ম বিফল মনে করিব । অতএব যদি অর্থগ্রহণ না করেন, বলুন, আর কি প্রকারে আপনার উপকার করিতে পারি?” মহাশ্বেত উত্তর করিলেন, “ তবে তোমার জমীদারির মধ্যে আমাকে থাকিবার স্থান দান কর, আমি বৎসরে বৎসরে তাহার খাজান দিব, আর কোন নদীতীরে একটা মন্দির নিৰ্ম্মাণ করাইয়া দেও, তথায় এই শিবপ্রতিম প্রতিরাত্রে পূজা করিব । ইহা ভিন্ন আমার প্রার্থনীয় আর কিছুই নাই।” স্বরেন্দ্রনাথ রুদ্রপুর গ্রামে মন্দির নিৰ্ম্মাণ করির দিলেন, এবং সেই অবধি মহাশ্বেতা ও র্তাহার কন্যা তথায় থাকিতেন।
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/৩২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।