পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\$$ বঙ্গবিজেত বাহির হইতে দেখিলে দুর্গের উচ্চ প্রাসাদ সম্পূর্ণ অন্ধকারাতকেবল একমাত্র গবাক্ষ হইতে আলোক নির্গত হইতেছে । সেই গবাক্ষপার্শ্বে এক অল্পবয়স্ক রমণী আসীনা,—হস্তে গণ্ডদেশ স্থাপন করিয়া কি চিত্তা করিতেছেন । রমণী গগনমণ্ডলের ললাটস্থ একমাত্র উজ্জ্বল তারার প্রতি নিরীক্ষণ করিতেছিলেন । র্তাহারও সুন্দর সীমস্তে একমাত্র উজ্জ্বল হীরকখণ্ড ঝকৃ বক্ করিতেছিল । রমণী কি চিত্ত করিতেছেন ;–কে বলিবে, কি চিন্তা করিতেছেন ? একি প্রেমের চিত্ত ? প্রেমের চিন্তাতে বদনমণ্ডল স্নান হয়, নম্র হয়,— এরূপ গৰ্ব্ববিশ্বফারিত হয় না । রমণীর বয়ঃক্রম সপ্তদশ বর্ষ হইবে,—যৌবনে সৰ্ব্ব অঙ্গ অনুপম অসাধারণ সৌন্দর্ঘ্যে বিকশিত হইয়াছে ; কিন্তু এ সাধারণ নারীজাতির সৌন্দৰ্য্য নহে,—অলৌকিক উদার স্বভাব ও চিত্তোন্নতিব্যঞ্জক। সে রূপরাশির সম্মুখে দাড়াইলে সহস প্রেমের সঞ্চার হয় না, শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঞ্চায় হয়। শরীর কিঞ্চিৎ ক্ষীণ, উন্নত ও দীর্ঘায়ত, অথচ ক্বোমলতা-পরিপূর্ণ। ললাট অতি সুন্দর, সুবঙ্কিম, অথচ উচ্চ ও প্রশস্ত ; সেরূপ প্রশস্ত পরিষ্কার ললাট পুরুষেয় কদাচিৎ দেখা যায়, স্ত্রীলোকের কখনই সম্ভবে না । নয়নের স্থির উজ্জ্বলতা, ওষ্ঠের সুচিক্কণতা, সমস্ত বদনের উন্নত ও গম্ভীর ভাব, হৃদয়ের মহত্ত্ব ও চিত্তের ঔদার্য্য ও মহাশয়ত্ব প্রকাশ করিতেছে ; সমস্ত অবয়বের ভাবভঙ্গী দেখিলে হঠাৎ প্রতীয়মান হয় যে, এ তীক্ষ জ্যোতিস্ময়ী তত্বঙ্গী মানুষী নহেন,—কোন যোগপরায়ণ স্বৰ্গবাসিনী মানবজাতির উন্নতি সাধনার্থ এই মর্ত্য জগতে অবতীর্ণ হইয়াছেন। সেই নিস্তব্ধ সায়ংকালে গবাক্ষপার্শ্বে বসিয়া রমণী সেই সুন্দর নিৰ্ম্মল আকাশপথ নিরীক্ষণ করিতেছিলেন । রমণীর বদনমণ্ডলও অপরূপ সুন্দর ও নিৰ্ম্মল । রজনী গভীর হইতে লাগিল ; আকাশের বিস্তীর্ণ নীলবর্ণ ক্রমে ঘোরতর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইতে লাগিল ;-রমণীর হৃদয়েও যেন চিত্তারজনী গভীর হইতে লাগিল, তাহার প্রশস্ত ললাটও যেন ক্রমশঃ ঘোরতর অন্ধকারাচ্ছন্ন হইতে লাগিল ; সুবঙ্কিম ভ্রযুগল অধিকক্ষর কুঞ্চিত হইতে লাগিল ; নয়ন হইতে তীক্ষতর উজ্জ্বলতর জ্যোতিঃ বহির্গত হইতে লাগিল । এই সময়ে একজন পুরুষ সেই গৃহে প্রবেশ করিয়া ডাকিলেন, “R' বিমলা চাহিয়া দেখিলেন, তাহার পিতা সতীশচন্দ্ৰ আসিয়াছেন।