$食 বঙ্গবিজেতা । > হইল। সতীশচত্রের হৃদয়কেন্দ্র ব্যথিত হইল, সহস্ৰ চিন্তায় প্লাবিত ইতে লাগিল। পূৰ্ব্বকথা স্মরণ হইতে লাগিল। শৈশবকালে যে খেলা করিয়াছিলেন, বাল্যকালে যে অধ্যয়ন করিয়াছিলেন, সে সকল স্মরণ করিতে লাগিলেন। যে বিদ্যালাভ তাহার পক্ষে বিষময় ফল ধারণ করিয়াছিল, সেই বিদ্যালাভের আরম্ভ-কথা মনে জাগরিত হইতে লাগিল । সমবয়স্কদিগের সহিত চতুষ্পাঠীতে অধ্যয়ন করিতে যাইতেন, অধ্যয়নের পর সেই বয়স্তদিগের সহিত নিষ্পাপ নিশ্চিন্তু চিত্তে ক্রীড়া রহস্য করিতেন । আজি তিনি বঙ্গদেশের একজন প্রধান লোক,—লক্ষ লক্ষ মুদ্রার অধিপতি । সেই লক্ষ লক্ষ মুদ্রা ব্যয় করিলে কি এক মুহূর্বের জন্য সেই নিষ্পাপ নিশ্চিন্ত চিত্ত ফিরিয়া পাওয়া যায় ? বাল্যকাল অতীত হইল, যৌবনকাল সমাগত । সেই যৌবনকালে তাহার স্মৃস্তিপথে কি গভীর পাপরেখা অঙ্কিত হইয়াছে ! বিদ্যাদর্প, তাহার পর ধনদৰ্প, তাহার পর প্রবল দুৰ্দ্ধৰ্ষ উচ্চাভিলাষ মনুষ্যের গৌরবের কায়ণ হয়, অনিষ্টেরও কারণ হয় ; তাহার পক্ষে সেই কাল উচ্চাভিলাষ কি ভয়ানক বিষময় ফল ধায়ণ করিয়াছে । তাহার পর সেই প্রজারঞ্জন মহানুভব বীরপুরুষ রাজা সমরসিংহের কথা সতীশচন্দ্রের পামর হৃদয়ে উদিত হইল। যে মহাত্মা বঙ্গদেশের গৌরবস্তম্ভস্বরূপ ছিলেন, প্রজাদিগের পিতাস্বরূপ ছিলেন, জমীদারদিগের জ্যেষ্ঠ ভ্রান্তাস্বরূপ ছিলেন, তিনি তাহার প্রাণসংহার করিবার জন্য যত্নবান হইয়াছিলেন । সে যত্ন বিফল হইল, মহানুভব বীরপুরুষ পামরকে মার্জন করিলেন, কিন্তু অচিরাং আপন শোণিতে সেই মহৎ পুণ্যকর্যের প্রতিফল পাইলেন। সমরসিংহের শোণিতাপ্পত ছিন্ন-শির দর্শন করিয়াছিলেন, তাহ স্মরণ হইতে লাগিল, সতীশচন্দ্র শিহবিয়া উঠিলেন, যেন সেই শোণিতাপ্লুত ছিন্নমস্তকবিকৃতি-ধারণ-পুরঃসর তাহার দিকে তীব্রভৃষ্টি করিতেছে, যেন বলিতেছে, “ পাপের প্রায়শ্চিত্তের বিলম্ব নাই৷ ” সতীশচন্দ্র পুনরায় শিহরিয়া উঠিলেন ; সম্মুখে তার চাহিতে পায়িলেন না, দীপ নিৰ্ব্বাণ করিলেন। রে মূৰ্খ! স্মৃতি-দ্বীপ অত শীঘ্ৰ নিৰ্ব্বণি হয় না । ঘোর অন্ধকারে বসিয়া সতীশচন্দ্র কি চিন্তা করিতেছেন ? কাহার সাধ্য সে চিন্তা অনুভব করে । সহস্ৰ বৃশ্চিক-দংশনাপেক্ষ সে চিন্ত ক্লেশদায়িনী। যাতনায় অস্থির হইয়া বল্লিতে লা লেন, “এ পাপের কি প্রায়শ্চিত্ত নাই ? যদি থাকে, হৃদয়ের শোণিত দিয়ও তাহা করিব। ভগবন, সহায় হও, এখনও বালিকার কথা শুনিয়া কাৰ্য্য করিব, এখনও ধৰ্ম্মপথে ফিরিতে চেষ্টা করিব । সত্য কৃথা
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/৪৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।