f 83, বঙ্গবিজেতা। : e
আশার প্রভাব অতি চমৎকার! যে আশা মনুষ্যকে কত সুখ ও সাম্বন প্রদান করে ;–সেই আশাই আবার কত দুঃখের কারণ হয় । দুঃখের সময় আশা কুহকিনীরূপে আমাদিগকে সাস্তুন প্রদান করে, সুখের সময় সেই আশা আবার কত ফুঃখের কারণ হয় । মানবহৃদয়ও অতি চমৎকার, অাশার কুহকে কতই খেল করে । বিপদের সময়, পীড়ার সময়, দুঃখের সময় হৃদয়ে ধৰ্ম্মভয় প্রবল হয়,—বিপদের শান্তি হইলে, পীড়া আরোগ্য হইলে, দুঃখের অবদান হইলে, ধৰ্ম্মভয়ও ক্রমে ক্রমে দূর হয়। ইতিপূৰ্ব্বে সতীশচন্দ্র বিপদ|শঙ্কা করিতেছিলেন । সঙ্গে সঙ্গে পাপের প্রতি ঘৃণা ও ধৰ্ম্মভয় মনে জাগরিত হইয়াছিল। ক্রমে কুহকিনী আশা কাণে কাণে বলিতে লাগিল, “ ভয় কি ? বিপদ কোথায় ? মিথ্যা ভাবনা কেন ?" সতীশচন্দ্রও সেই কুহকে মুগ্ধ হইলেন, ভাবিলেন, বিপদ না আনিলেও না আসিতে পারে, ভাবিতে ভাবিতে বিপদভয় অন্তৰ্হিত হইল, সঙ্গে সঙ্গে ধৰ্ম্মভয়ও চলিয়া গেল। মানবহৃদয়ে বিপদভয় যত প্রবল, ধৰ্ম্মভয় যদি সেইরূপ প্রবল হইত, তাহ হইলে কি পৃথিবীতে এতাদৃশ দুঃখ থাকিত ? অনেকক্ষণ চিন্তা করিয়া সতীশচন্দ্র বলিলেন, “শকুনি তোমার উপরই আমি নির্ভর করিব । অশু বিপদের কি কোন সম্ভাবন। আছে ?” শকুনি সমর বুঝিয়া উত্তর করিলেন, “ আশু কি বিলম্বে, গুপ্তকথা প্রচারের কোন সস্তাবনা নাই ; আর যদিই বা বিপদের সম্ভাবন থাকে, ভবাদৃশ মহাপুরুষের পক্ষে কি বিপদের সময় কাতরতা যুক্তিসিদ্ধ? বঙ্গদেশে আপনার যশ, আপনার সাহস কে না প্রশংসা করে ? আপনার ক্ষমতায় মত ক্ষমতা কাহার ? আপনার গৌরবের মত কাহার গৌরব ? আপনায় অধিকারের মত কাহার অধিকার ? বালিকার বাক্য অবলম্বন করিয়া এ সমস্ত সহসা ত্যাগ করা কি বঙ্গদেশের রাজাধিরাজ দেওয়ান মহাশয়ের পক্ষে উচিত কৰ্ম্ম ? আপনাকে পরামর্শ দিব তামার কি সাধ্য, আপনিই বিবেচনা করুন, আপনাকে পরামর্শ দিতে পারে, এরূপ পণ্ডিত বঙ্গদেশে জন্মগ্রহণ করেন নাই।” সতীশচন্দ্র এ কথার কোন উত্তর করিলেন না । মনে মনে ভাবিতে “ লাগিলেন, “ যথার্থই কি আমি বাতুল হইয়াছিলাম,--বালিকার কথায় ভীত হইয়াছিলাম !” এই প্রকার ভাবিতে ভাবিতে লজ্জিত ও কুষ্ঠিত কুইলেন। শকুনি তাহার মুখ দেখিয়া আন্তরিক ভাব বুঝিতে পারিলেন, মনে মনে বলিতে লাগিলেন,—“ ই ! শকুনি শৰ্ম্মার হাত হইতে এখনই নিস্তার পাইবে ? এখন হুইয়াছে কি ?” প্রকাশুে বলিলেন, “রুদ্রপুরে যে চর পাঠাইয়াছিলেন, তাহার সংবাদ শুনিয়াছেন কি ?”