* বঙ্গবিজেতা । {{స না; যে পরিমাণে নিদ্রা হইল, তাহ স্বল্পপরিপূর্ণ। সেই দেবপ্রাঙ্গণ, সেই চন্দ্রালোকে মহেশ্বরগীত, সেই দেবমন্দিরে মহেশ্বরমূর্তি, তৎপার্শ্বে সেই উপাসক, এই সমস্ত বিষয়ের স্বপ্ন দেখিতে লাগিলেন । বার বার সেই উপাসককে দেখিতে লাগিলেন, কখন নিদ্রিত, কখন বা উপাসনায় মগ্ন, কখন উপাসনাস্তে দণ্ডায়মান, কখন বীরপুরুষের ন্যায় তরবারিহস্তে গর্জন করিতেছেন । শেষবার যে স্বপ্ন দেখিলেন, সে অতি ভীষণ, বোধ হইল যেন আপনি উপাসনায় মগ্ন রহিয়াছেন, কিন্তু মহেশ্বর-চরণে পুষ্প না দিয়া মকরধ্বজ-চরণে পুপ দিতেছেন। যতবার মহেশ্বর-চরণে পুষ্প দিতে যান, ততবারই সেই পুষ্প কন্দৰ্পচরণে পতিত হয়। কিছুতেই মহেশ্বর-পূজা করিতে পারিলেন না। দেখিয়া মহেশ্বর মূৰ্ত্তিমান হইয়া ক্রোধ প্রকাশ করিলেন । বিভূতি-বিভূষিত ; কেশে গঙ্গা কল কল করিতেছে ; ললাটে চন্দ্র ধক্ ধৰ্ব্ব করিতেছে ; ফণীন্দ্র সকল তেজে তর্জন গর্জন কুরিতেছে। মহেশ্বর আজ্ঞা দিলেন, “ রমণী-হৃদয় পাপে কলুষিত, হৃদয় ভেদ কর ।” তৎক্ষণাৎ সেই অপরিচিত উপাসক তরবারিদ্বারা রমণীর হৃদপিণ্ড বাহিয় করিয়া থও খণ্ড করিয়া দূরে নিক্ষেপ করিল। বিমল চীৎকার শব্দ করিয়া জাগিয়া উঠিলেন । - جاني জাগিয়া দেখিলেন, গৃহে স্থৰ্য্যরশ্মি পতিত হইয়াছে ; প্রাঙ্গণে লোকের সমাগম হইয়াছে ; কলরব শুনা যাইতেছে । নিশি-জাগরণে বিমলার চক্ষে কালিমা পড়িয়াছে ; ভয়ানক স্বপ্নবশতঃ র্তাহার স্বাভাবিক গৌরবদন রক্তশূন্য হইয়। অধিকতর গোর হইয়াছে ; কপোলে, গণ্ডে, বক্ষঃস্থলে ঈষৎ ঘৰ্ম্ম হইয়াছে। বিমলা আলুলায়িত কেশ কথঞ্চিৎ বদ্ধ করিয়া গাত্ৰোখান করিলেন। ভাবিলেন, “পাপের সমুচিত দণ্ড হইয়াছে ; আমি পিতার মঙ্গলার্থ এই মন্দিরে আসিয়া অপরিচিত পুরুষের বিষয় চিত্ত করিয়াছি, সেই জন্যই এই অনিষ্টস্থচক স্বপ্ন। আমি এ চিন্ত হৃদয় হইতে উৎপাটিত করিব,--আবশ্যক হয়, হৃদয়সমেত উৎপাটিত করিব।” এই বলিয়া কক্ষ হইতে বাহিরে গমন করিলেন । সমস্ত দিন বিমলা অন্যমনস্কার ন্যায় হইয়া রহিলেন । স্বপ্ন কথা তাহার বার বার মনে পড়িতে লাগিল । চিন্তা করিলেন, “ যদি আমি পাপীয়সী হই, সেই মহাত্মা আমার হৃদয় ছেদন করিবেন কেন ?" অনেক চিন্তা করিয়া কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না । কাহাকে মনের কথা জিজ্ঞাসা করেন, এমন লোক পাইলেন না। ভবিষ্যতে র্তাহার কপালে কি আছে বুঝিতে পারিলেন না । -
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/৬৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।