శ్రీధి বঙ্গবিজেতk ! সেদিন সন্ধ্যাকালে বিমল উপাসনার্থ গমন করিলেন । সমস্ত দিন যদিও তিনি অনামনঙ্গ হইয়াছিলেন, উপাসনার সময় তাহার চিত্ত স্থির ভাব অবলম্বন করিল। দ্বিগুণ ভক্তির সহিত বিমলা ঈশ্বর আরাধনা করিতে লাগিলেন। প্রথমে পিতার মঙ্গলার্থ পূজা করিলেন, তৎপরে আপন পাপক্ষয় কামনায় পূজা করিতে লাগিলেন। বিমলার মহেশ্বর প্রতি অচল। ভক্তি, পূজা করিতে করিতে র্তাহার নয়ন হইতে দুরবিগলিত শ্রদ্ধাশ্ৰু পতিত হইতে লাগিল । সাষ্টাঙ্গ প্ৰণিপাত করিয়া উপাসনা শেষ করিলেন । উঠিবমাত্র পুনরায় সেই অপরিচিত উপাদককে দেখিতে পাইলেন। তিনিও পুজা সমাধা করিয়া গাত্ৰোখান করিয়াছেন । বিমলার চিত্তসংযমের ক্ষমতা ছিল, আদ্য তিনি চিত্ত কথঞ্চিৎ সংষত করিয়াছিলেন । ক্ষণেক মাত্র বিমলা সেই উপাসকের দিকে সতৃষ্ণনয়নে নিরীক্ষণ করিয়া অবনতমুখে মন্দির হইতে বাহির হইবার উদ্যম করিলেন। যুবক কিঞ্চিৎ বিস্মিত হইলেন। দুই দিনই সেই পরম সুন্দরী রমণীকে দেখিতে পাইলেন, ছুই দিনই সুন্দরী একদৃষ্টে তাহার দিকে ক্ষণেক মাত্র চাহিয়া রহিয়াছিলেন। তিনি ইতিপূর্বেই জানিতেন যে, দেবমন্দিরেও কুলটা কামিনী কুকামনায় যাতায়াত করিয়া থাকে, কিন্তু বিমলার আকৃতি ও মুখের ভাব দেখিয়া সেরূপ চিত্ত যুবকের মনে একবারও স্থান পায় নাই। তাহার হৃদয়ে স্থির সিদ্ধান্ত এই হইল যে, এই রমণীর কিছু বিশেষ বক্তব্য আছে ; কিন্তু লজ্জায় অপরিচিত পুরুষের সহিত কথা কহিতে পারিতেছেন না । একবার ইচ্ছা হইল নিকটে যাইয়া জিজ্ঞাসা করেন, অপরিচিত, তরুণী, ভদ্রকন্যার সহিত কিরূপে ব্যক্যালাপ করিবেন। দুই দিনের কথা ক্ষণেক চিন্তা করিয়া অবশেষে ভাবিলেন, “ যদি আমি না, জিজ্ঞাসা করি, বোধ হয়, কোন বিশেষ গৃঢ় কথা অব্যক্ত থাকিবে,—বোধ হয়, যে কারণে রমণী মন্দিরে আদিয়াছেন, নিষ্ফল হইবে ।” - ধীরে ধীরে বিমলার নিকটে যাইয়া বলিলেন,—“ভদ্রে ! অপরিচিত: হইয়াও আপনার সহিত কথা কহিতেছি, ক্ষমা করুন ; কিন্তু আমার বোধ হইতেছে, আপনার কিছু বক্তব্য আছে—যদি থাকে, আজ্ঞা করুন।” বিমলার কর্ণে অমৃতবৰ্ষণ হইল, বোধ হইল, এরূপ সঙ্গীতপরিপূর্ণ * কণ্ঠধ্বনি র্তাহার কর্ণকুহরে কখন প্রবেশ করে নাই । তাহার প্রাতঃকালের প্রতিজ্ঞ, সন্ধ্যাকালের চিত্তসংযম একেবারে দ্রবীভূত হইয় গেল। শরীর কম্পিত হইতে লাগিল,—মুখ অবনত করিয়া দাড়াইয়া রহিলেন ।
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/৬৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।