পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গবিজেতা । ঘটিয়াছে আমরা ঠিক তাহাই লিখিতেছি, সুরেন্দ্রনাথ মাঝির সহিত আলাপ করিয়াছিলেন, আমরা তাহাই লিখিতে বাধ্য হইলাম। এ যথার্থ ইতিহাসে কি আমরা কাল্পনিক কোন কথা বানাইয়া লিখিতেছি ? রাম ! সুরেন্দ্রনাথ ও নাবিক এক্ষণে সেই ক্ষুদ্র কুটীরে উপস্থিত হইলেন। তথায় জেলেমাঝিদিগের একটী ক্ষুদ্র গ্রাম ছিল, কিন্তু গ্রামের অন্যান্য । কুটীরাবলী হইতে কিঞ্চিং দূরে এই কুটার নিৰ্ম্মিত হইরাছিল। প্রাতঃকালের অন্ন ছিল, সেই অন্ন উভয়ে আহার করিলেন, পরে নাবিক আপনার বৃত্তাত্ত বলিতে আরম্ভ করিলেন – “ যুবক ! আপনার হৃদয়ে যদি ক্রোধ ও দর্প থাকে, তাহ ত্যাগ করুন,— এই দপেই আমার সৰ্ব্বনাশ হইয়াছে। শৈশবাবস্থা হইতে আমি অতিশয় গৰ্ব্ব ছিলাম। শুনিয়াছি, অতি শৈশবেও আমার কোন বিষয়ে ইচ্ছা যদি ন। সম্পন্ন হইত, তাহা হইলে আমি এক দিন, দুই দিন অনাহারে থাকিতাম । এই বিজাতীয় ক্রোধেই আমার সৰ্ব্বনাশ হইয়াছে । “ বাল্যাবস্থায়ও এইরূপ ছিলাম। আমার মন স্বভাবতঃ পাঠাভ্যাসে রত হইত। কিন্তু কখন যদি গুরুমহাশর অন্যায় তিরস্কার করিতেন, তাহ হইলে আমার সেই বিজাতীয় ক্রোধের আবির্ভাব হইত ; পুস্তক দূরে নিক্ষেপ করিতাম ; সহস্র বেত্রাঘাতেও আমি কথা কহিতাম না ; ক্ৰন্দন করিতাম ন! ৷ গুরুমহীশর অামাকে ভাল বাসিতেন, কিন্তু সময়ে সময়ে আমার ক্রোধ দেখিয়া আমার উপর অত্যন্ত রুষ্ট হইতেন । একদা এরূপ কৃষ্ট হইয়াছিলেন যে, সমস্ত পাঠশালার ছাত্রের সম্মুখে বলিলেন, " এই বালক বেত্ৰাঘাতে ক্ৰন্দন করে না, কিন্তু অদ্য যদি না ক্রনন করাই, তাহ। হইলে আমি এ কার্য্য পরিত্যাগ করিব ।’ এই বলিয়া তিনি তামাকে বেত্ৰাঘাত প্রভৃতি সহস্ররূপে যাতন দিলেন, কিন্তু আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম, মুখ দিয়া বাক্য বাহির হর নাই, চক্ষু হইতে জল বাহির হয় নাই। অবশেষে -গুরুমহাশয় ক্ষিপ্তপ্রায় হইয়া বলিলেন, ‘অগ্নি দিয়া উহাকে দাহন কর । এক খণ্ড তাগ্নি আনীত হইয়া আমার শরীরে স্থাপিত হইল, আমি যাতনায় অস্থির হইলাম, তথাপি কথা কহিলাম না,—মুহূৰ্ত্তমধ্যে অচেতন হইয়৷ ভূমিতে পড়িয়া গেলাম । তখন গুরুমহাশয়ের সংজ্ঞা হইল । তিনি আমাকে পুত্রবৎ স্নেহ করিয়া ক্রুেড়ে করিলেন, জলসেচনের দ্বারা আমি শীঘ্রই এচেতন প্রাপ্ত হইলাম। সেই অবধি আমার পড়া সাঙ্গ হইল। গুরুমহাশয় আর আমাকে পড়াইলেন না। আমি জন্মের মত মুর্থ রছিলাম।