বঙ্গবিজেতা । ৭৩ আমি সকল রূপ স্নেহ-সুখে জলাঞ্জলি দিয়া স্থিরপ্রতিজ্ঞ হইয়া দূর হইলাম। সেই অবধি আমি পিতৃগৃহ ত্যাগ করিয়াছি। তখন আমার বয়ঃক্রম দ্বাদশ বৎসর মাত্র ।
- কেবল ইহাও নহে ; পিতৃদত্ত কোন দ্রব্যই আমার সঙ্গে লইব না, আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ! হইল। রাত্রিকালে ছদ্মবেশে ভিক্ষা করিয়া একখানি ছিন্ন বস্ত্র পাইলাম, তাহাই পরিধান করিয়া আপন বস্ত্র পিতৃগৃহের সন্নিকটে নিক্ষেপ করিয়া প্রস্থান করিলাম । মনে করিলাম, পিতার নিকটে আর আমি ঋণগ্রস্ত নহি । রে মুঢ় অন্তঃকরণ ! আশৈশব যত্নসহকারে, স্নেহসহকারে, অর্থসহকারে পিত। যে মানুষ করিয়াছিলেন, সে ঋণ কোথায় যাইবে ?
“ তাহার পর দশ বৎসর আমার জীবন যে কিরূপে অতিবাহিত হইয়াছে তাহা জিজ্ঞাসা করিবেন না। মরুভূমিতে প্রচণ্ড বায়ুর ন্যায় আমার জীবনের দশ বৎসর বহিতে লাগিল । প্রচণ্ডত আছে, কিন্তু ফল নাই, অর্থ নাই, কাহার ও উপকার নাই, কাহারও অপকার নাই। নির্জন প্রাণিশূন্য পৰ্ব্বতপার্শ্বে সমুদ্রগর্জনবৎ আমার হৃদয়ের দুর্দমণীয় প্রবৃত্তি সমুদয় গর্জন করিয়াছে, কিন্তু সে গর্জনের শ্রোতা নাই ;–সে গর্জনে কেহ ভীত হয় নাই, কেহ আমন্দিত হয় নাই, কেহ বিস্মিত হর নাই। পাতালপ্রবাহিণী, ভৈরবকল্লোলিনী ভোগবীর তরঙ্গমালার ন্যায় পাতাল হইতেও অধিক অন্ধকারপরিপূর্ণ আমার হৃদয়কন্দরে কত প্রবৃত্তি প্রবাহিত হইয়াছে, কিন্তু সে প্রবাহ ভোগবতীর ন্যায় মনুষ্যের অদৃশু অন্ধকারাচ্ছন্ন। " দশ বৎসর অতীত হইলে সেই অন্ধকাররাশি সহসা আলোকচ্ছটায় চমকিত ও উদ্দীপ্ত হইল।” এই পৰ্য্যন্ত বলিয়া বক্ত। ক্ষণেক নীরবে চিন্ত৷ করিতে লাগিল। যে কথা বলিতে হইবে তাহা যেন একবার হৃদয় মধ্যে আলোচনা করিয়া লইল । সুরেন্দ্রনাথ নিম্পন্দনেত্রে সেই অপুৰ্ব্ব উন্মত্তপ্রায় লোকের দিকে দেখিতে লাগিলেন, অনন্তমনে তাহার গম্ভীর ও উন্মত্ততার কথা শুনিতে লাগিলেন । সেও ক্ষণেক পর অরিন্ত করিল— 曙 “ যে সকল প্রবৃত্তিতে আমার হৃদয় দশ বৎসর কাল ব্যথিত হইয়াছিল, তাহায় মধ্যে প্রেম সৰ্ব্বাগ্রেগণ্য ৷ (সুরেন্দ্রনাথ অধিকতর আগ্রহের সহিত শ্রবণ করিতে লাগিলেন । ) সামান্য স্ত্রীলোকের প্রেম আমি আকাঙ্ক্ষা করিতাম না, যে প্রেম মানব-হৃদয়কে একেবারে পরিপূর্ণ করিতে পারে,-- যে প্রেম-জীবনের অংশস্বরূপ, দেহে আত্মার স্বরূপ, যে প্রেম শেষ হইলেই জীবন শেষ হইবে, সেইরূপ প্রেম অামি আকাক্ষা করিতাম। কতবার ufst