8 বঙ্গবিজেতা । প্রভাতবায়ু রহিয়া রহিয়া শস্তক্ষেত্রের উপর খেলা করিতেছিল। শস্ত আনন্দে যেন তাহীর সঙ্গে সঙ্গে নৃত্য করিতেছিল। বহুদূরে প্রাত্তরসীমায় দুই একটী পল্লীগ্রাম দেখা যাইতেছিল ; কুটীরাবলি দেখা যায় না, কেবল নিবিড় হরিৎবর্ণ বৃক্ষাবলি নয়নগোচর হইতেছিল। আকাশ অতি নীল, পক্ষী সকল গান করিতেছিল। কৃষকগণও পল্লীগ্রাম হইতে আসিতে আসিতে মনের উল্লাসে গান করিতেছিল । ব্ৰহ্মচারী যাইতে যাইতে একজন কৃষককে জিজ্ঞাসা করিলেন, “রুদ্রপুর আর কত দূর ?” কৃষক উত্তর করিল, “অধিক দূর নাই, প্রায় আধ ক্রোশ হইবে ।” সেই ক্ষেত্র হইতে একজন ভদ্রোচিত বেশে ব্রহ্মচারীর নিকট আসিতে আসিতে জিজ্ঞাসা করিল, “ঠাকুর, রুদ্রপুরে যাইতেছেন ? আমি তথাকার লোক ; চলুন, একত্রে যাই,—আপনার নাম কি, নিবাস কোথায় ?” এই বলিয়া ব্রাহ্মণকে প্রণাম করিল । ব্রাহ্মণ উত্তর করিলেন, “ আমার নাম শিখণ্ডিবাহন, ইচ্ছামতী নদীতীরে মহেশ্বরমন্দির হইতে আসিতেছি। তোমার নাম কি ?” “আমার নাম নবীন দাস ; এই স্থানে আমার কিছু জমী আছে, সেইজন্য আমি আসিয়াছিলাম।” শিখ। “ এবার শস্য হইয়াছে ?” নধী। “ঠাকুর, আমার দুই কুড়ি বৎসর পার হইয়াছে, এমন সুন্দর শম্ভ কখন দেখি নাই। বিধাতার অনুগ্রহের সীমা নাই। তবে—” শিখ । " তবে কি ?” নবী । “অদৃষ্টে কি আছে কে বলিতে পারে ? মোগল পাঠানে যেরূপ যুদ্ধ, কি হয়, কে জানে ? যেস্থান দিয়া একবার সেনা যায়, সেস্থান ষেন মরুভূমি হইয়া পড়ে ।” ক্ষণেক পর নবীন দাস আবার বলিতে লাগিল, “ আমাদের জমীদারপুত্রের কি হইয়াছে, শুনিয়াছেন ?” শিখ। “না ; কি হইয়াছে ?” নবী। “তিনি এক প্রকার উন্মত্তের মত হইয়াছেন, কারণ কেহ জানে না। তাহার পিতা তাহার আয়োগ্যর জন্য কত যত্ন করিলেন, কোন ফল হইল না । আপনি ঠাকুর লেখাপড়া জানেন, আপনি কিছু স্থির করিতে পারেন ?” শিখ । “ শাস্ত্রে উন্মত্ততার অনেক কারণ নির্দেশ করে,--বন্ধুর বিয়োগ, রমণীর প্রেম--”
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।