* বঙ্গবিজেতা 1? টোডরমল্পের মুখ গম্ভীর হইল । বলিলেন, "বৎস, যদি এই যুদ্ধে তোমার নিধন হয়, তবে তোমার পিতার কি মনঃপীড়া হইবে ! আমারও পুত্র আছে, সেই জন্যই এই ভাবনা আসিতেছে । ধারুর বয়ঃক্রম তোমারই মত, তাহার সাহস তোমারই মত, তোমারই মত সে বিপদকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ; মরণকে ভয় করে না। যদি সে যুদ্ধে নিধন প্রাপ্ত হয়, তাহার পিতার হৃদয়ে বজাঘাত হইবে । তথাপি রাজকার্যে মরণাপেক্ষ বাঞ্ছনীয় আর কি আছে ? তোমার পিতাকে লিখিও যে ধারুর পরমায়ু শেষ হইলে সে যুদ্ধেই নিহত হয়, ইহা অপেক্ষ টোডরমল্লের বাঞ্ছনীয় আর কিছুই নাই।” ইন্দ্রনাথ নিরুক্তর হইয়া রহিলেন । টোডরমল্ল আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “পিতা ভিন্ন তোমার আর কে প্রিয় বান্ধব তাছেন ?” ইন্দ্রনাথের সরলার কথা মনে আদিল । লজ্জায় মুখ অবনত করিলেন। একবার ভাবিলেন, এই সময়ে সরলার কথা সমস্ত অবগত করা ইয়। বিচার প্রার্থনা করি ; সে কথা মুখে আনিতেছিলেন, এমন সময়ে টোডরমল্ল অন্য কথা আনিলেন, ইন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য সফল হইল না । ক্ষণেক পর রাজা প্রস্থান করিলেন, ইন্দ্রনাখও নানা বিষয় চিত্ত| করিতে করিতে আপন শিবিরে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিলেন । যেদিন এইরূপ কথোপকখন হইয়াছিল, সেই দিনই সেনাদিগের মধ্যে খাদ্যদ্রব্যের বড় কষ্ট হইয়াছিল । অনেক সৈনিক পুরুষ একেই টোডরমল্লের বৈরাচরণ করিবার মানস করিয়াছিল, তাহাতে আবার এই কষ্ট হওয়াতে সুযোগ পাইবার আশা করিয়াছিল ; কিন্তু রাজা টোডরমল্ল এরূপ সতর্কত ও বুদ্ধিসহকারে কার্য্য করিতে লাগিলেন, যে উপরি উক্ত সৈনিকগণ আপন স্বার্থসাধনের কোন সুযোগই পাইল না। রাজা টোডরমল্ল দিন দিন সেনাদিগকে আশ্বাস দিতে লাগিলেন ; দিল্লী হইতে অর্থ আসিলেই সেনাদিগের মধ্যে বিতরণ করিয়া তাহাদিগকে তুষ্ট করিতে লাগিলেন, সদৰ্পে সকলের সম্মুখেই বলতেন,—“আমরা কখনই জঘন্য পাঠানদিগকে .জয়লাভ করিতে দিব না, দিল্লীশ্বরের অবশ্যই জয় হইবে।” সেনাপতির এইরূপ আশ্বাসবাক্য শুনিয়া সৈন্যগণ উৎসাহপরিপূর্ণ হইত। বিরুদ্ধাচারী সৈনিকগণ শিবিরমধ্যে বিদ্রোহ ঘটাইবার কোন সুযোগই না পাইয়া একে একে শক্রর নিকট পলায়ন করিবার মানস করিল। শত্রুরাও নিতান্ত জঘন্য বা হীনবল নহে । প্রথম পরিচ্ছেদেই বল। হইয়াছে, বঙ্গদেশের স্ববাদার মজফর খাঁর নিধনপ্রাপ্তির পর সমস্ত বঙ্গদেশ পাঠনিসৈন্যে প্লাবিত হয়। যে দেশ টোডরমল্প ক্রমান্বয়ে দুইবার জয়
পাতা:বঙ্গবিজেতা.djvu/৮৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।