পাতা:বঙ্গভাষা ও সাহিত্য - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१० বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বলি দলিত, যে চরণরেণু ধারণ করিতে শুক সন্ন্যাসী, নারদ। বৈরাগী, যোগেশ্বরগণ তপোরত-সেই চরণ দেখিতে দেখিতে নিমাই মুস্থিত হইয়া পড়িলেন। সঙ্গিগণের যত্নে মূৰ্ছা ভঙ্গ হইল, তখন অজস্র নয়নাশ্র ফুল্লারবিন্দগুচ্ছের ন্যায় সেই শ্ৰীচরণ উদ্দেশে বৰ্ষিত হইতেছিল, কঁাদিতে কঁাদিতে তিনি পথ দেখিতে পান নাই, বাষ্পরুদ্ধকণ্ঠে সঙ্গিগণকে বলিলেন,—“তোমরা গৃহে ফিরিয়া যাও, আমি আর সংসারে যাইব না ; আমি প্ৰাণেশ্বরকে দেখিতে মথুরায় চলিলাম।” এই অপূর্ব ভক্তি-উচ্ছসিত পূৰ্বরাগের আবেশময় যুবককে সঙ্গিগণ নানা উপায়ে প্রত্যাবৰ্ত্তিত করিলেন। গৃহে আসিয়া নিমাই সেই পাদপদ্মের কথা বলিতে পারেন নাই,-বলিতে যাইয়া ভাবাবেগে কথা রুদ্ধ হইয়াছে; ‘কি দেখিয়াছি বলিতে উদ্যত হইয়া একবার শ্ৰীমান পণ্ডিত, আবার গদাধরের কণ্ঠ জড়াইয়া কঁাদিতে কঁাদিতে মূচ্ছিত হইয়া পড়িয়াছেন। তিনি যাহা দেখিয়াছিলেন, তাহা তাহার ভাষায় ব্যক্ত হয় নাই—“তঁহার মুক্তাদামসম উজ্জ্বল অশ্রুজিলে ব্যক্ত হইয়াছিল। এই প্রেমোন্মত্ত বালককে শচীদেবী পুত্রবধূব রূপ দ্বারা বাধিয়া রাখিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন,— “লক্ষ্মীরে আনিয়া প্রভুর নিকটে বসায়। দৃষ্টিপাত করিয়াও প্ৰভু নাহি চায়। কোথা কৃষ্ণ কোথা কৃষ্ণ বলে অনুক্ষণ। দিবানিশি শ্লোক পড়ি করায় ক্ৰন্দন ॥”-চৈ, ভা, আদি । ইহার পর কাটোয়ার কেশব ভারতীর নিকট মন্ত্রগ্রহণ, শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্য নাম গ্রহণ ও সন্ন্যাস অবলম্বন অচিরে সম্পন্ন হইল ; তখন র্তাহার বয়স ২৪ বৎসর মাত্র ( ১৫০৯ খৃঃ) । গয়া গমন অবধি তঁাহার ইতিহাস স্বতন্ত্ররূপ। এরূপ অনিৰ্ব্বচনীয় সৌন্দৰ্য্যজড়িত ছবি ইতিহাসের পটে যুগ যুগান্তর পরে একবার প্রকাটিত হইয়া থাকে। বক্তৃতার গুণ নহে,-রূপ দেখাইয়া চৈতন্যদেব পৃথিবী মোহিত করিলেন ;-শিশিরস্নিগ্ধকুসুমসৌরভ বক্তৃতা দ্বারা উপলব্ধি করাইতে হয় না। চৈতন্যদেব স্বীয় ভক্তিময় অশ্রুসিক্ত মূৰ্ত্তিখানি দ্বাবে দ্বারে দেখাইয়াছেন, যে দেখিয়াছে সেই ভুলিয়াছে; সত্যবাই, লক্ষ্মীবাই-বেশ্যাদ্বয় তঁহাকে প্ৰতারিত করিতে যাইয়া কঁাদিয়া পদ শরণ লইয়াছে। ভীলপন্থ, নরোজী প্ৰভৃতি দাসু্যাগণ র্তাহার রূপে আকৃষ্ট হইয়া কঁাদিয়া পায় ধরিয়াছে। হরিনাম করিতে করিতে র্তাহার অঙ্গ পুলকিত ও চক্ষু মুদ্রিত হইয়াছে, তখন সেই চক্ষু ফাটিয়া অতি মনোহর মুক্তাদাম পতিত হইয়াছে। তমালকে জড়াইয়া কঁাদিয়াছেন ; কদম্ব বৃক্ষ দেখিয়া অজ্ঞান হইয়াছেন ; বিষ্ণুর উদ্দেশে প্রদত্ত ভোগের অন্ন খাইতে চক্ষু জলে আর্দ্র হইয়াছে ও এক একটী অন্ন অমৃত জ্ঞানে খাইয়া পাগল হইয়াছেন। বেঙ্কট নগরের নিকট এক বৃক্ষতলে তিন দিন তিন রাত্রি পাগলের মত হরি বলিয়া কঁাদিয়া ধূলায় লুষ্ঠিত হইয়াছিলেন ; এই সময়ের মধ্যে আহার, নিদ্রা, বাহ্যজ্ঞান কিছুই ७थंश*, नान् & ভক্তি-মাধুৰ্য্য।