Եր বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস নিরপেক্ষভাবে প্রত্যেক সমাজের কুলমৰ্য্যাদা বা সামাজিক আসন নির্দেশ করিয়া দিতেন। সকল বিষয়ে তাহার সমাজপতিগণের দক্ষিণহস্ত-স্বরূপ ছিলেন। এ কারণ সমাজ ও আর্য্য ধৰ্ম্মরক্ষার্থ যে সকল কুলগ্রস্থ রচিত হয়, তাঁহা “কুলশাস্ত্ৰ” বলিয়া পরিগুগীত হইয়াছিল। আচাৰ্য্য যেমন আৰ্যসমাজের ধৰ্ম্ম-বিষয়ে উপদেষ্ট, সেইরূপ যে সকল মহাত্মা কুল-বিষয়ে উপদেষ্ট ছিলেন, তাহারাই “কুলাচাৰ্য্য” আখ্যায় সম্মানিত হইয়া ছিলেন । {} আর্যসমাজে ব্রাহ্মণই এক মাত্র আচাৰ্য্য, কিন্তু কায়স্থ-কুলীন-সমাজে ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ উভয়েই ‘কুলাচাৰ্য্য’ পদ লাভ করেন। যতদিন তাহারা ধৰ্ম্ম ভাবিয়া সমাজ-সেবায় জীবন উৎসর্গ করিয়াছিলেন, ততদিন আৰ্য-কায়স্থ-সমাজের আর্য-গৌরব অক্ষুণ্ণ ছিল, ততদিন কুলধৰ্ম্ম ও সদাচার পরিত্যাগ করিতে কঁহই সাহসী হন নাই, ততদিন উজ্জল-প্রভামণ্ডিত স্থৰ্য্যের দ্যাঃ স্কুলীন সমাজও প্রতিভা-মণ্ডি ১ এবং জাতীয় গৌরব-রক্ষায় তৎপর ছিলেন ;–কিন্তু যে দিন হইতে কলিযুগের কালমাহাস্থ্যগুণে কুলাচ -সমাজে স্বার্থপরতা সমূদিত হইল, অপণ্ডিতের হস্তে কুলশাস্ত্র-রক্ষার ভার পড়িল, সেই দিন হইতেই কায়স্থ-সমাজের ভাগ্যচক্র পরিবৰ্ত্তিত হইতে চলিল। সদাচারী নিঃস্বার্থ কুলপণ্ডিতগণের কথা বলিতেছি না, কিন্তু অপণ্ডিত কৃষ্ঠাত্তগণ স্বার্থের মোহিনী মায়ায় বিমুগ্ধ হইয় অনেকটা দোষান্বেষী হুইয়া পড়িলেন। যেখানে তাহাদের স্বার্থে ব্যাঘাত হইবার সম্ভাবন হুইয়াছে, সেখানেই তাহারা তাহাদের জাতীয় কর্তব্য ভুলিয়া কুলে কলঙ্ক আরোপ করিবার চেষ্টা করিয়াছেন। তাছাদের হস্তে কত উচ্চ বংশ কলঙ্কের পন্ধিল সলিলে নিমজ্জিত ইয়াছেন, কত সন্ত্রান্ত বংশের কুলপরিচয় নষ্ট হইয়াছে, এমন কি, তাঙ্গদেরই হস্তে কায়স্থ-সমাজের উপর শূদ্র স্বারোপরূপ বিষময় শেল নিক্ষিপ্ত হইয়াছে। কুলীন-সমাজ মানসন্ত্রম ও কুলমর্যাদা রক্ষার ভয়েই র্তাহাদের অসঙ্গত দাবী দাওয়া রক্ষা করিয়া চলিতেন, কাজেই তাহারা ঐ সকল কুলঙ্কের নিকট উপেক্ষিত হইলেন না। কিন্তু মৌলিক সমাজ বরাবরই কুলঙ্কদিগকে সন্দেহের চক্ষে দেখিতেন, কলীনগণের দ্যায় তাঙ্গর কুলঙ্কগণের ততটু সন্মান রাখতেন না। পূৰ্ব্বতন কলাচার্য্যগণ আর্যধৰ্ম্মরক্ষার ব্যবস্থানুসারে ও সম্বন্ধনির্ণয়ের স্থবিধার জন্য মৌলিকগণেরও কুলপঞ্জিকা লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিতেন, কিন্তু পরবত্তী আধুনিক অপণ্ডিত কুলঙ্কগণ মৌলিকগণের পরিচয়-বক্ষায় তাহাদের বিশেষ স্বার্থ নাই ভাবিয়া মৌলিকগণকে এককালে উপেক্ষা করিলেন। এই সময় হইতেই মৌলিকগণের বংশপরিচয় বিলুপ্ত হইবার উপক্রম হয় ; তাই এখন পর্যন্ত কুলীনগণের রীতিমত বংশাবলি পাইবার যথেষ্ট সুবিধা থাকিলেও মৌলিকগণের আদ্যোপান্ত বংশাবলি সংগ্রহের যথেষ্ট অসুবিধ ঘটিয়াছে। বলিতে কি, এক্ষণে উপযুক্ত ও স্থপণ্ডিত কুলাচাৰ্য্যগণের অভাবে এবং প্রকৃত সমাজতত্ত্বানভিজ্ঞ ও জাতীয় কর্তব্য জ্ঞান-পরিশূন্ত কুলঞ্জের হস্তে কায়স্থসমাজ উপযুক্ত মৰ্য্যাদা ও উপযুক্ত ব্যবস্থা না পাওয়াতেই কুলশাস্ত্র ও কুলজের হতদের ঘটিয়াছে। তাই এক সময়ে কায়স্থসমাজের সর্বত্রই র্যাহাদের গতিবিধি ছিল –কুলীনসমাজে যশোমণ্ডিত ও প্রপূজিত হইয়া যাহারা সমাজের দক্ষিণহস্তস্বরূপ
পাতা:বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (কায়স্থ কাণ্ড, প্রথমাংশ, রাজন্য কাণ্ড).djvu/২৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।