পাতা:বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী (উত্তর ভারত) - জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰয়াগ ዓã» সুমধুর ভজন এবং সুমিষ্ট শাস্ত্রালাপ তাহার প্রতি গ্রামবাসিগণের শ্ৰদ্ধা, ভক্তি ও বিশ্বাস আকর্ষণ করিল। এইখানেই তিনি এ দুর্দিনেও শাস্তিতে কাটাইতে পারিয়াছিলেন। বিদ্রোহানল ক্ৰমেই নিৰ্বাপিত হইয়া আসিলে হঠাৎ একদা কাপ্তেন । সেবিয়ারের জনৈক অনুচর সেই গ্রামে কোন প্রয়োজন উপলক্ষে আসিয়া উপস্থিত । হয় এবং দৈবযোগে রাসবিহারী বাবু তাহাকে দেখিতে পান। তাহার নিকট সমস্ত অবগত হইয়া তিনি স্বহস্তে একখানি পত্ৰ লিখিয়া সাহেবের নিকট পঠাইয়া দেন। কাপ্তেন হডসন এক সহস্র দুরাণী সৈন্য লইয়া এক পল্টন গঠন করেন। তাহার। নাম হয় Hudson's Horse, সেবিয়ার সাহেব সেই পল্টন হইতে একশত সৈন্যসহ কাপ্তেন হডসনকে রাসবিহারী বাবুর উদ্ধারার্থ পাঠাইয়া দেন। কাপ্তেন সাহেব । রোহতকের সেই গ্রামের নিকট তাঁবু ফেলিয়া রাসবিহারী বাবুকে আনিবার জন্য । সৈন্য পাঠান। দুই জন সৈনিক গ্রামের প্রত্যেক গৃহে গিয়া বলিতে থাকে। “পল্টনের বাবুকে কে লুকাইয়া রাখিয়াছ শীঘ্ৰ বাহির করিয়া দাও। নচেৎ গ্রামশুদ্ধ । তোপে উদ্ভূইয়া দিব।” গ্রামবাসিগণ পল্টনের বাবুকে নিশ্চয় করিতে না পারিয়া । কৰ্ত্তব্য নিদ্ধারণার্থ সন্ন্যাসীরই নিকট আসিয়া সমস্ত নিবেদন করিল। রাসবিহারী বাবু তখন সেই সৈনিক দুটাকে ডাকাইয়া বলিলেন “আমাকে তোমাদের সাহেবের কাছে লইয়া চল আমি পল্টনের বাবুর সন্ধান বলিয়া দিব।” তাহাই হইল। হডসন সাহেব তাহার পরিচয় পাইয়াও চিনিতে পারেন নাই। অবশেষে হাতের লেখার সহিত চিঠির লেখা মিলাইয়া এবং বিশেষ জিজ্ঞাসাবাদের পর তঁহাকে লইয়া দিল্লী যাত্ৰা করিলেন। দিল্লীতে গিয়া সন্ন্যাসী বেশেই রাসবিহারী বাবু সেবিয়ার : সাহেবের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। সাহেব তাঁহাকে দেখিয়া চিনিতে পারিলেন কিন্তু তাহার অবস্থা দেখিতেই তঁহার দুই চক্ষু আদ্ৰ হইয়া আসিল । দিল্লীতে শান্তি স্থাপিত হইলে রাসবিহারী বাবু পল্টনের সঙ্গে অম্বালায় এবং তথা হইতে সপরিবারে এলাহাবাদে আসিয়া উপস্থিত হন। এখানে তিনি পুনরায়। কলেক্টরিতে কৰ্ম্ম গ্ৰহণ করেন এবং যথাসময়ে পেন্সন লইয়া মুটিগঞ্জের বাড়ীতেই অবশিষ্ট জীবন অতিবাহিত করেন। বিদ্রোহের পর তিনি ৪৩ বৎসর জীবিত ছিলেন এবং ২৮ বৎসর পেন্সন ভোগ করিয়া ৮৫ বৎসর বয়সে ১৯০০ খৃঃ অব্দে। পরলোক গমন করেন। শেষ জীবনে তিনি ধৰ্ম্মালোচনা ও সাধন ভজনেই মনোনিবেশ করিয়াছিলেন। বহু সাধু সন্ন্যাসী তঁহার নিকট যাতায়াত করিতেন।