পাতা:বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী (উত্তর ভারত) - জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস.pdf/৫৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

898 বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী । ধৰ্ম্মহীনতা এবং মুর্থতায় পঞ্চনদে যখন চতুর্দিক অশান্তিময় হইয়া উঠিয়াছিল, যখন কি স্বদেশীয় কি বিদেশীয়, যে কোন খৃষ্টান শতদ্রু পার হইলে শিখতরবারিতে দ্বিখণ্ডিত হইত, যখন শিখভিন্ন অপর কাহারও শতদ্রুপার হইবার অধিকার ছিল না, এমন সময়ে বাঙ্গালী গোলোকনাথ শতদ্রুপার হইয়া পঞ্জাবের সমাজসংস্কার ও সুশিক্ষা-বিস্তাররূপ ব্ৰত ধারণ করিয়া তথায় খৃষ্টধৰ্ম্ম প্রচার আরম্ভ করিলেন। শতদ্রু পার হইয়া গোলোকনাথ দুইদিন “বিদ্যাশিক্ষার আবশ্যকতা ও নিৰ্ম্মল চরিত্রের গুণ” সম্বন্ধে বক্তৃতা করিলেন। সেই ওজস্বিনী বক্তৃতা শুনিয়া পঞ্জাবীগণ র্তাহার শতমুখে প্ৰশংসা করিল। কিন্তু তৃতীয় দিবস তিনি “খুষ্টের উদার চরিত্র ও খৃষ্ট ঈশ্বরাবতার” এই বিষয়ে বক্তৃতা করায় তাহারা তাহার অভিপ্ৰায় বুঝিতে পারিয়া হিন্দু, মুসলমান ও শিখ একত্র মিলিত হইয়া ভয়ানক প্রহার করতঃ তাহাকে ফিলোর দুর্গে বন্দী করিয়া রাখিল। উপাসনা ও সঙ্কীৰ্ত্তনে তঁহার সে রাত্ৰি কাটিয়া গেল। র্তাহার অসামান্য ধৰ্ম্মভাবে মুগ্ধ হইয়া শিখগণ র্তাহাকে পরদিন প্ৰভাতে মুক্তিদান করিল। ১৮৪৭ অব্দে গোলোকনাথ রেভারেণ্ড উপাধি প্ৰাপ্ত হইয়া জালন্ধরে অবস্থিত হইলেন । গোলোকনাথের আগমনে জঙ্গলময় জালন্ধর দিব্যনগরীতে পরিণত হইল। গিৰ্জাঘর, মিশনবাড়ী, পুস্তকালয়, অনাথাশ্রম, চিকিৎসালয় প্রভৃতি স্থাপিত হইল। গোলোকনাথ তখন পঞ্জাবের চতুর্দিকে ভ্ৰমণ করিয়া সমাজসংস্কার ও শিক্ষাবিস্তার বিষয়ে ঘোর আন্দোলন করিতে লাগিলেন ও বহুসংখ্যক পঞ্জাবীকে খৃষ্টধৰ্ম্মে দীক্ষিত করিলেন। গোলোকনাথের চেষ্টায় পঞ্জাবের নানাস্থানে ইংরাজী স্কুল, দেশীয়ভাষা শিক্ষার পাঠশালা, পুস্তকালয়, বক্তৃতাগৃহ, চিকিৎসালয়, অনাথাশ্রম এবং বালিকা-বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইল। অনেক বড় বড় লোক আসিয়া গোলোকনাথের শিষ্যত্ব স্বীকার করিলেন । ইহার সুপ্ৰসিদ্ধ শিষ্যবর্গের মধ্যে কপূরতলার মহারাজের জ্যেষ্ঠপুত্র প্রিন্স হরনাথসিংহ বাহাদুর, জি, সি, এস, আই, ও রেভারেণ্ড আবদুল্লা এবং তঁহার সহধৰ্ম্মিণীর নাম উল্লেখযোগ্য। রেভারেণ্ড আবদুল্লার এক কন্যা পঞ্জাৰ গভৰ্ণমেণ্ট বালিকাবিদ্যালয় সমূহের ইনস্পেকূট্রেস। অপর কন্যা পঞ্জাবের সুপ্ৰসিদ্ধ চিকিৎসক। কপূৰ্বতলার রাজকুমার রেভারেও গোলোকনাথের শিষ্য এবং জামাতা। ইহার পুত্র ও রাজবংশীয় দৌহিত্রগণ এক্ষণে কৃতী হইয়াছেন। গোলোকনাথ পাঞ্জাবের নানা স্থানে অনেক ভূসম্পত্তি রাখিয়া গিয়াছেন। ১৮৯১ খৃঃ অব্দে ২রা আগষ্ট, ৭৬ বৎসর বয়সে,