বিদ্যাপতির পদাবলী । মৈথিল কবি বিদ্যাপতি খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর শেষভাগে ও পঞ্চদশ শতাব্দীর অনেকাংশ জুড়িয়া বিদ্যমান ছিলেন। ইহার সম্পূর্ণ বিবরণ বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের ২১৯–২৩৩ পৃষ্ঠায় দ্রষ্টব্য। বয়ঃ-সন্ধি । কিছু কিছু উতপতি অন্ধুর ভেল। চরণ চপলগতি লোচন লেল ॥ (১) অব সব খনে রহু আঁচরে হাত । (২) লাজে সখীগণে না পুছয় বাত ॥ কি কহব মাধব বয়সক-সন্ধি । হেরইতে মনসিজ-মন রহু,বন্দী ॥ (৩) শুনইতে রস-কথা থাপয় চিত । যৈসে কুরঙ্গিণী শুনএ সঙ্গীত ॥ (৪) শৈশব যৌবন উপজল বাদ । কেও ন মানয়ে জয় অবসাদ ॥ (৫) বিদ্যাপতি কৌতুক বলিহারি। শৈশব সে তনু ছোড় নাহি পারি ॥ (১) যৌবনের কিছু কিছু অন্ধুর উৎপন্ন হইল। পদের চঞ্চল গতি রহিল না, তাহ চক্ষু লইল । অর্থাৎ বালিক-সুলভ চরণ-চাঞ্চল্য তিরোহিত হইল, কিন্তু যুৱতী-সুলভ চক্ষের চাঞ্চল্য দেখা দিল । (২) এখন সমস্ত সময়েই অঞ্চলে হাত দেখা যায়, অর্থাৎ শরীর ঢাকিয়া রাখিবার জন্ত সৰ্ব্বদা ব্যগ্র । (৩) বয়সের সন্ধি অর্থাৎ বাল্য-যৌবনের মিলন-কালের (কৈশোরের) কথা তোমাকে কি বলিব, তাহ দেখিয়া কামদেবের মন আবদ্ধ হয়। (৪) মৃগী যেরূপ সঙ্গীত শুনিবার জন্ত (চিত্ত স্থাপন করে), প্রেমের কথা শুনিতে সেইরূপ চিত্ত স্থাপন করে (থাপয়ে) । (৫) শৈশব এবং যৌবনের দ্বন্দ্ব আরম্ভ হইল, কেহই জয় বা পরাজয় মানিল না। অর্থাৎ শৈশব জয়ী কি যৌবন জয়ী বুঝিতে পার গেল না, কতকগুলি চিহ্ন দ্বারা শৈশব এবং অপর কতকগুলি দ্বারা যৌবন প্রতীয়মান হইতে লাগিল ।
পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।