প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—মৃত্যুঞ্জয়ের প্রবোধ-চন্দ্রিকা—১৮১৩ খৃঃ। ১৭০৩ জ্ঞানাধীন এক পদার্থ জ্ঞান যে বাক্যে হয় সে ক্লিষ্ট বাক্য যেমন বি শব্দে গরুড় তৎকর্তৃক জিত অর্থাৎ ইন্দ্র তার আত্মজ অৰ্জুন তার দ্বেষী কর্ণ তার পিতা স্থৰ্য্য তার কিরণেতে তাপিত যে জন সে হিমের নাশক অগ্নি তার অমিত্র জল তার ধারক মেঘ তাতে ব্যাপ্ত আকাশকে দেখিয়া আনন্দিত হয়। এতাদৃশ বাক্য ক্লিষ্ট বাক্য এ পণ্ডিতদের ইষ্ট নহে ইহ সরস্বতী কণ্ঠভরণে কালিদাস কহিয়াছেন। পরস্পর বিরুদ্ধাৰ্থ বাক্য সস্কুল বাক্য হয় যেমন আমি যাবজ্জীবন মৌনী আমার পিতা নিঃসন্তান মাতা বন্ধ্যা ছিলেন পিতামহীর পুত্র হয় নাই এবং আমনি খাইতে দাত ভাঙ্গিল সিন্দুর পরিব কিসে এতাদৃশ বাক্য। অন্ধ-গো-লাঙ্গল ন্যায়ের পরিচয় । এক অন্ধ ব্যক্তি শ্বশুরালয়ে গমন করত মাঠের মধ্যে এক গোয়ালকে কহিলেন হে গোপ আমি অন্ধ, তুমি আমাকে আমার শ্বশুরের ঘরে লইয়া যাও, গোপ কহিলেন আমি অনেকের গরু চরাই তোমাকে তোমার শ্বশুরবাটী লইয়া গেলে গরু সব কে কমনে যাবে অতএব আমার যাওয়া হয় না । তোমার শ্বশুরের গরু এইটা অতি বড় স্বশীল ইহার লাঙ্গুল ধরিয়া তুমি যাও এ যে গৃহে প্রবিষ্ট হবে তোমার শ্বশুরের বাড়ী সেই । অন্ধ গোপের এই বাক্য শুনিয়া দৃঢ়মুষ্টিতে গোপুচ্ছ ধরিল পরে ঐ গরু অন্ধের দৃঢ়মুষ্টির চাপনেতে প্রমাদ ভাবিয়া উত্তরোত্তর যেমন যেমন পদাঘাত করে অন্ধও পর পর তেমনি মুষ্টিদ্বয়েতে দৃঢ়তর আঁটিয়া ধরে ইহাতে ঐ গরু অতিশয় লম্ফ ঝঙ্ক করাতে ও ছেচুড়ি দিয়া লইয়া যাওয়াতে ঐ অন্ধ ছিন্ন ভিন্ন অগ্নাঙ্গ ও নগ্ন হইয়া দুই এক দণ্ড রাত্রি সময়ে অতিশয় কষ্টেতে গ্রাম নিকটে পৌছিলে পর ঐ অন্ধের শ্বশুরের চাকর লোকেরা দেখিয়া গো চোর জ্ঞানে কিল চাপড় লাথি গুতা ধাক্কা প্রহর মারিয়া দিয়া করিয়া গরুকে তাহার হাত হইতে ছাড়াইয়া লইয়া গেল। ইহার তাৎপৰ্য্য মুখের উপদেশ গ্রহণ কদাচ করিবে না করিলে গোপোপদেশ দুরাগ্রহ এই অন্ধের ন্তায় হইতে হয়। অৰ্দ্ধ জরতীয় ন্যায়ের বিবরণ । অতি বড় উদার এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ দুর্ভিক্ষ সময়ে অন্নাভাবে পরিজন প্রতিপালনে অত্যন্ত অসমর্থ হইয়া এক স্বকীয় গোকে প্রতি হট্টে লইয়া যান ক্রেতা ব্যক্তিরা বয়ঃক্রম জিজ্ঞাসা করিলে পর যেমন আমাদের অধিক বয়স হইলে প্রাচীন জানিয়া অন্ত হইতে কিছু অধিক দেয় তেমনি আমি যদি এ গোর অধিক বয়স কহি তবে প্রাচীন জ্ঞানে অধিক মূল্য হইতে পারবে
পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৬১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।