পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন গদ্য-সাহিত্য—রাসস্থলদরী–১৯শ শতাব্দীর মধ্যভাগ । আমি সোহাগের আরসী হইয়াছি না জানি আমার কি হইল। তখন আমার এই ভয়ই হইতে লাগিল আজ আমাকে ছেলেধরা ধরিয়া লইয়া যাইবে উহাকেও বুঝি লইয়া যাইবে। এই ভয়ে আমি আমাদের বাটতে না গিয়া ঐ গঙ্গাস্নানের সঙ্গিনীর বাটীতে গেলাম। তখন উহার মা আমার মুখের দিকে চাহিয়া উহাকে বলিল উহার মুখ লাল হয়েছে কেন। তুমি বুঝি উহাকে কাদাইয়াছ। এই বলিয়া তাহার মা তাহাকে গালি দিল। সে তাহার মায়ের কথা শুনিয়া হাসিতে লাগিল। পরে তাহার মা গেলে সে আমাকে বলিল দেখ আমার মা আমাকে গালি দিল আমি তো তোমার মত কঁাদিলাম না। তুমি যেমন আহলাদে মেয়ে হইয়াছ। তুমি বুঝি তোমার মায়ের কাছে গিয়া সকল কথা বলিয়া দিবে। তখন আমি মাথা নাড়িয়া বলিলাম না আমি মায়ের কাছে গিয়া কিছুই বলিব না। ইহা বলিয়া আমি বিষণ্ণ বদনে সেই স্থানে বসিয়া থাকিলাম। কিছুক্ষণ পরে আমাদের বাট হইতে একজন লোক আসিয়া আমাকে বাটী লইয়া গেল। আমি বাট গিয়া দেখিলাম সকলেই আমার ঐ সকল কথা বলিয়া হাসিতেছে। আমাকে দেখিয়া গঙ্গাস্নান হয়েছে বলিয়া আরো হাসিতে লাগিল। তখন আমার খুড়া দাদা এবং অন্তান্ত সকলেও বলিতে লাগিলেন আর এ সকল মেয়েদের সঙ্গে উহাকে খেলিতে দেওয়া হইবে না। কল্য হইতে উহাকে বাহির বাটতেই রাখা যাইবে। তখন সে একদিন ছিল এখনকার মত মেয়ে ছেলের লেখা পড়া শিখিত না। বাঙ্গল স্কুল আমাদের বাটীতেই ছিল। আমাদের গ্রামের সকল ছেলে আমাদের বাটীতেই লেখা পড়া করিত। এক জন মেম সাহেব ছিলেন, তিনিই সকলকে শিথাইতেন। পর দিবস প্রাতে আমার খুড়া আমাকে কাল রঙ্গের একটা ঘাঘরা পরাইয়া একখান উড়ানী গায়ে দিয়া সেই স্কুলে মেম সাহেবের কাছে বসাইয়া রাখিলেন। আমাকে যেখানে বসাইয়া রাথিতেন আমি সেই থানেই বসিয়া থাকিতাম। ভয়ে আমি আর কোন দিকে নড়িতাম না । তখন আমার বয়ঃক্রম আট বৎসর। তখন আমার শরীরের অবস্থা কি প্রকার ছিল তাহা আমি বলিতে পারি না। কিন্তু সকলে যাহা বলিত যাহা শুনিয়াছি তাহাই বলিতেছি— বর্ণটি আছিল মম অত্যন্ত উজ্জ্বল । উপযুক্ত তারি ছিল গঠন সকল । সেই পরিমাণে ছিল হস্তপদ গুলি । বলিত সকলে মোরে সোণার পুতুলী ॥ ›ogo